পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ রাজনৈতিক সমঝোতা সোনার দেশ বাংলা ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ পাথরবাটি ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা রাজনৈতিক সমঝোতা সোনার পাথরবাটি (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) পর পর কয়েকটা আলোচনা শেষে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারে, বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের ততে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে উদাসীন এমন অনেকগুলো দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের কথা বার বার উচ্চারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এই রাজনৈতিক সমাধানের জন্য কারো কারো মতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হতে হবে। আবার কারো কারো মতে, ইদানীং সে মতটাই প্রাধান্য পাচ্ছে, ‘৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত গণ-প্রতিনিধিগণ আর বর্তমানের একনায়কত্ববাদী সামরিক জান্তার মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই সে রাজনৈতিক সমাধান পেতে হবে। এ ব্যাপারে ভারতের বক্তব্য স্পষ্ট। বাংলাদেশ সমস্যা ভারত পাকিস্তান বিরোধ থেকে উদ্ভুত নয়। কাজেই ভারতের এ ব্যাপারে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে আলোচনা যদি হতেই হয় তা হতে পারে কেবল বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে ইয়াহিয়া চক্রের। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, রাজনৈতিক সমাধানটা কি হতে পারে তা কেউই উল্লেখ করছেন না। অর্থাৎ প্রস্তাবকদের মতে কোন রকম পূর্বশর্ত ছাড়াই দু'পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে এবং সমাধানের সূত্র বের করতে হবে। অর্থাৎ ২৫শে মার্চের আগে ব্যর্থ দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় ফিরে যেতে হবে। আমরা ধরে নিলাম রাজনৈতিক সমাধানের জন্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা বসলেন। তখন তাঁদের সামনে আলোচ্যসূচী কি হতে পারে এবং দু'পক্ষের দেওয়া নেওয়ার সুযোগ কতটা বিদ্যমান রয়েছে তা ভেবে দেখা যাক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরবর্তী পর্যায়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে যে সব জটিলতা দেখা দিয়েছিল এবং পরবর্তী ২৩ বৎসরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বারংবার যেভাবে বিপর্যয় এসেছে তার মূল কারণগুলি অনুসন্ধান করলে নিম্নলিখিত কয়েকটি সত্য পরিস্কার হয়ে ধরা পড়বে। ক) পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল শতকরা ৫৬জন, পশ্চিমাঞ্চলের শতকরা ৪৪জন। স্বভাবতই এ দেশে নিয়মতান্ত্রিক পার্লামেন্টারী রাজনীতি চালু থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের প্রাধান্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে। খ) সংখ্যালঘিষ্ঠ পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষতঃ পাঞ্জাব, ঐতিহাসিক কারণে প্রশাসন, অর্থনীতি এবং দেশরক্ষা বিভাগে একচেটিয়া কর্তৃত্বের অধিকারী। দেশে নিয়মতান্ত্রিক পার্লামেন্টার ব্যবস্থা চালু হতে দিলে সংখ্যালঘিষ্ঠের একচেটিয়া কর্তৃত্ব বিলুপ্ত হতে বাধ্য। এমতাবস্থায় পাঞ্জাবী নেতৃত্বের পক্ষে সম্মিলিত পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন চালু হতে দেওয়া আত্মহত্যার শামিল। ফেডারেল শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যে দাবী শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে পেশ করেছিলেন পশ্চিমা রাজনীতিকরা এখন পর্যন্ত তাকেই মেনে নিতে পারেন নি। এমতাবস্থায় কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাবে তাদের সম্মত হবার সম্ভাবনা খুবই