পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

402 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ অধিকৃত বাংলায়- দেশ বাংলা ১৮ই নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা অধিকৃত বাংলায় চাকমারা দমে গেছেঃ বিদ্রোহী মিজো লালডেঙ্গা পাক ছাউনীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার উপজাতীয়দের নানাভাবে প্রলব্ধ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির পাক চেষ্টা ফলপ্রসু হয়নি। আমাদের সংবাদদাতা চট্টগ্রাম ঘুরে এসে জানিয়েছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা উপজাতির প্রধান রাজা ত্রিদিব রায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত পরিষদ সদস্য আউংশে প্র’র মাধ্যমে মর্যাদা দেবার প্রতিশ্রুতি পেয়ে চাকমা নেতারা সে ফাঁদে পা-ও দিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী কিছু সংখ্যক চাকমাকে ট্রেনিংও দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা একাধিক কারণে মোটেই কাজে আসেনি। প্রথমতঃ চাকমারা সংখ্যায় খুবই নগন্য। সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয়দের সংখ্যা আশি হাজার। দক্ষিণের বোমং ও উত্তরে মং রাজার অনুগামীরা চাকমাদের কোনকালেই সুনজরে দেখেনি। কারণ, চাকমারা তুলনামূলকভাবে কিছুটা উন্নত এবং অন্যান্য উপজাতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখে থাকে। এদিকে রামগড়ের মং রাজা মুক্তিবাহিনীর পক্ষ নিয়েছেন। এপ্রিল-মে মাসে রামগড় যখন মুক্তিবাহিনীর পাহারাদারের কাজ করেছে। রামগড়ে পাক-বাহিনীর প্রবেশের পর তিনি সপরিবারে মুক্তাঞ্চলে চলে যান এবং বোমং উপজাতীয়রা তুলনামূলকভাবে আরো অনুন্নত ও অসংহত। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থানগত কারণে এবং উপজাতীয়দের সংখ্যাল্পতা ও বিচ্ছিন্ন অবস্থানের ফলে তাদের কার্যকলাপ নিজ নিজ এলাকাতেই সীমাবদ্ধ। ফলে এই মুহুর্তে তাদের নিয়ে মাথা ঘামাবার প্রয়োজন মুক্তিবাহিনীর আদৌ আছে বলে মনে হয় না। মুক্তিবাহিনীর সামগ্রিক বিজয়ের পথে উপজাতীয়দের মাধ্যমে প্রয়োজনেই। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে তাদের পৃথক অস্তিত্ব একেবারেই অসম্ভব। আর একমাত্র স্বাধীন বাংলাদেশেই উপজাতীয়রা তাদের পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার এবং উপজাতীয় স্বার্থের রক্ষা কবচ পেতে পারে, এ সত্য উপজাতীয় নেতাদের অজানা থাকার কথা নয়। এতদসত্ত্বেও যে দু’একজন উপজাতীয় নেতা বর্তমানে পাক-বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়েছে, তারা চিরদিনই স্রোতের শেওলার মত এধার ওধার করে এসেছে। উপজাতীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে নয়, ব্যক্তিগত লোভ লালসা থেকেই এরা পাক-সরকারের পক্ষ নিয়েছে। বলাবাহুল্য সে জন্যই এদের ভূমিকার কোন রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। চাকমা নেতা ত্রিদিব রায় স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়ে কনভেনশন মুসলিম লীগের মন্ত্রী হয়েছিলেন। গতবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তিনি জয়ী হয়েছেন। জয়ী হবার পর আওয়ামী লীগের দুয়ারে ধরনা