পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

405 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড নুরুল আমীনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করা হলে ভুট্টো কি মেনে নেবেন ? শেখ মুজিবের সাথে উপ-প্রধানমন্ত্রী হতে ভুট্টোর আপত্তি ছিল না। কিন্তু নুরুল আমীনকে তিনি মানবেন কেন ? সুকৌশলে কলকাঠি ঘুরিয়ে তিনি সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছেন- তবে কি নুরুল আমীনকে গদিতে বসবার জন্য ইয়াহিয়ার সাথে ভুট্টোর সমঝোতা হতে পারে, নূরুল আমীনেরও দু’জনকেই একই সাথে নাচাবার খেল ইয়াহিয়ার ভালভাবেই জানা আছে। কিন্তু নুরুল আমীন, ভুট্টো, দুজনকেই একই সাথে খুশী রাখার কোনো তেলেসমাতী দাওয়াই ইয়াহিয়ার মদের আলমারীতে লুকানো আছে কি ? আয়ুবের মিলিত হতে দেখা যেতো। প্রত্যেকের সাথেই এই হুশের পাগল এমন একটি ভাব দেখাতো যেন অন্য নেতাদের কানাকড়িও দাম নেই, কেবল ওই নেতাটির উপরই যা কিছু ভরসা। একইভাবে ইয়াহিয়া বিভিন্ন দলকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়। এমন কি ডানপন্থী দলগুলিও ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। সুচতুর ইয়াহিয়া এবার ভুট্টো এবং নূরুল আমীনকেও কি সেই একই কায়দায় খেলাচ্ছে ? শ্যাম্পেন পূজারী ইয়াহিয়াকে শুরুতে হাবা গোবা মনে হতো। আওয়ামী লীগেরও কেউ কেউ ইয়াহিয়াকে ভালো মানুষ’ বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। ইয়াহিয়া ক্ষমতায় থাকতে চায় না, গণতন্ত্র কায়েম করে ব্যারাকে ফিরে যেতে চায়, এ কথা অনেকেই বিশ্বাস করতেন। ইয়াহিয়া নিজেও সেরকম ভাবসাব দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু সময়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইয়াহিয়া শেয়ানের শেয়ান। বিশ্বকে ধোঁকা দেবার জন্য তার সর্বশেষ পদক্ষেপ সম্পর্কে যা কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তার পাতায় পাতায় বেড়ানো শয়তানী বুদ্ধির আরো কিছুটা পরিচয় পাওয়া যাবে। শোনা যাচ্ছে, ইয়াহিয়ার শাসনতন্ত্রে সাম্প্রদায়িক নির্বাচন ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ হিন্দুকে আলাদা রেখে দেখাবার চেষ্টা হবে যে, পাকিস্তানে বাঙালী মুসলমানদের সংখ্যা অবাঙালীদের চাইতে বেশী নয়। আর যেহেতু পাকিস্তান ইসলামিক রাষ্ট্র, সেহেতু মুসলমানদের সংখ্যা দিয়েই গুরুত্ব যাচাই হবে। বিগত সাইক্লোন, গৃহযুদ্ধ এবং বিপুলসংখ্যক আদিবাসীর দেশত্যাগের কারণ দেখিয়ে এবারকার জনগণনায় বাঙালীদের সংখ্যালঘিষ্ঠ করে দেখিয়ে আগামীতে তদনুযায়ী ভাগ বাঁটোয়ারার নীতিও তাতে লিপিবদ্ধ থাকবে। ইয়াহিয়া তার শাসনতন্ত্র পরিষদে পেশের আগে সাধারণ্যে প্রকাশ দূরের কথা এমনকি বিভিন্ন দলের নেতাদেরও দেখতে দেবে না। এ ব্যাপারে নূরুল আমীনের অনুরোধও প্রত্যাখাত হয়েছে। অর্থাৎ উপনির্বাচনের প্রহসন শেষ হবার পর আপনি মোড়লদের নিয়ে যে পরিষদ গড়া হবে তাতে এই শাসনতন্ত্র কেবল পড়েই শোনানো হবে এবং তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র কর্তব্য হবে হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করা।

}; # 来

এই মেকী গণপরিষদেও যাতে বাঙালীদের কর্তৃত্ব না থাকে ইয়াহিয়া সে ব্যাপারেও সজাগ। ৮৭জন আওয়ামী লীগ নেতার সদস্যপদ বহাল রাখার পেছনেও হয়তো সেই অভিসন্ধি কাজ করেছে। কারণ, তাঁদের অনুপস্থিতিতে পরিষদে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সংখ্যা বেশী থাকছে এবং আর্ডিনান্সের