পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

412 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ পাকিস্তান নামে কোন দেশ থাকবে না দেশ বাংলা ৯ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ-৭ম সংখ্যা ভারত-বাংলা উপমহাদেশে নতুন যুগের সূচনা পাকিস্তান নামে কোন দেশ থাকবে না (দেশবাংলা বিশেষ নিবন্ধ) জাতিসংঘের মার্কিন দালালরা যে কোন সিদ্ধান্তই নিক না কেন অথবা ইয়াংকি সাম্রাজ্যবাদ এবং চৈনিক সুবিধাবাদ শেষ রক্ষার যত চেষ্টাই করুক না কেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের উদয়কে রোধ করার সময় পার হয়ে গেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ভারতকে আক্রমণকারী আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। কিন্তু বাংলার ও ভারতের মানুষ সাম্রাজ্যবাদের এই শেষ ভরসাস্থলটির উপর আস্থা হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান সংকটকে কেন্দ্র করে যদি ভারত জাতিসংঘ ত্যাগও করে তাহলে ভারতের মানুষ বিন্দুমাত্র অখুশী হবে না। চীন এতকাল জাতিসংঘে ছিল না। ইন্দোনেশিয়াও কিছুকাল আগে জাতিসংঘ ত্যাগ করেছিল। তাতে দু'দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়নি। ভারতেরও হবে না। বাংলাদেশেরও না। তাছাড়া এই জাতিসংঘের তথাকথিত পুরোহিতরাই জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধাচরণের পথ প্রদর্শক। দক্ষিণ আফ্রিকায়, রোডেশিয়ায় জাতিসংঘের সুস্পষ্ট নির্দেশ কি মানা হয়েছে ? রোডেশিয়ায় ৫০ লক্ষ আফ্রিকানের উপর ২ লক্ষ শ্বেতাংগের শাসন ও শোষণের পক্ষে মদত দিচ্ছে বৃটেন ও তার সহযোগীরা জাতিসংঘের বিধিনিষেধ অমান্য করেই। আর আজ যদি সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর উপর গুটি কতক পেশাদার সৈন্যের নৃশংস অত্যাচার বন্ধ করার জন্য ভারত এগিয়ে গিয়ে থাকে, জাতিসংঘের তথাকথিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই, তাহলেই বা দোষটা কোথায় ? বাংলাদেশের ভেতর মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনী এখন সর্বময় কর্তৃত্বে। ঢাকার সর্বশেষ পকেটটিও শত্ৰমুক্ত হবে দু’একদিনেই। তখন আর বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের কোন দখলই থাকবে না। এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পাকিস্তান আর বাংলাদেশের উপর কোন কর্তৃত্ব দাবী করতে পারবে না। নূরুল আমীনের মত বাঙালী কুইসলিংকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দাঁড় করানো সত্বেও শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে হাত গুটাবার পর পশ্চিম পাকিস্তানকে ঘিরে পাকিস্তান নামটি টিকিয়ে রাখাও ক্রমেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। পাঠান ও বেলুচিস্তানীরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে কেবল সেজন্যই নয়, নিছক নিবুদ্ধিতা এবং গোয়াত্মীর দরুন কায়েমী স্বার্থের দুধের হাঁড়িটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য এখন পশ্চিমাদের মধ্যে মারাত্মক কলহ বেধে গেছে। বাধতে বাধ্য। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলিকে একত্রে রাখার প্রধানত যোগসূত্র ছিল বাংলাদেশের উপর শোষণের সুযোগ। উপনিবেশের ফায়দা লুটবার জন্য সিন্ধু-পাঞ্জাবের ভূস্বামী এবং ধনকুবেররা নিজেদের মধ্যে আপোষ রক্ষা করে নিয়েছিল। এখণ তাদের আপোষ হবে কিসের ভিত্তিতে? তাছাড়া লষ্ঠিত সম্পদের ছিটে-ফোঁটা বিলিয়ে এবং বাহ্যিক উন্নয়নের শানশওকত দেখিয়ে এতকাল সেখানকার সাধারণ মানুষকেও বশে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিরাট এক সেনাবাহিনী পোষা হয়েছে যাতে করে প্রায় প্রতিটি পরিবার থেকেই কেউ না কেউ সৈনিক হয়েছে। এখন আর তা সম্ভব হবে না। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য, চাকুরী-বাকুরী