পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

414 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় দেশ বাংলা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তান থেকে শিক্ষা নিতে হবে ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা সম্পাদকীয় পাকিস্তান থেকে শিক্ষা নিতে হবে বাংলাদেশ তার স্বাধীন ও সার্বভৌম সত্তা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রুপায়িত হয়েছে লাখো শহীদের প্রাণের মূল্যে, অযুত কর্মীর নিরলস সংগ্রামে, প্রতিটি পরিবারের সীমাহীন দুঃখভোগ এবং অবিশ্বাস ত্যাগস্বীকারে। স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতেই হয়, কিন্তু বাঙালী জাতি মূল্যের অধিক দিয়েছে। পৃথিবীর বুকে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এ শিশুর তোলপাড় হয়েছে অনেক বেশী। জন্মের আনুষঙ্গিক গর্ভর্যন্ত্রণায় সারা বিশ্ব কেঁপে উঠেছে। জন্মকে ত্বরান্বিত করার জন্য অপারেশন ও চালাতে হয়েছে। এক অর্থে বাংলাদেশ সিজারিয়ান বেবী”। আর সে জন্যেই সম্ভবতঃ এই শিশুর প্রতিপালনে প্রথম থেকেই খুব বেশী সতর্ক হওয়া দরকার। ঔপনিবেশিক এবং কায়েমী স্বার্থের শোষণে বাংলাদেশে কোনকালেই সুস্থ অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারেনি। বৃটিশ শাসনামলে আজকের বাংলাদেশ ছিল কলিকাতার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মহলের শোষনের প্রশস্ত তম ক্ষেত্র। রাজধানী শহর কলিকাতাকে কেন্দ্র করে সেদিন যে পুঁজিচক্র গড়ে উঠেছিল, তাতে বাংলার মানুষের অংশীদারিতু ছিল না। পাকিস্তানী শাসনের চব্বিশ বছরে এই শোষনের হার আরো বহু গুণে বেড়েছে। তারপরও যা কিছু অস্থি চৰ্ম অবশিষ্ট ছিল, এবারকার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং পলায়মান শত্রসেনাদের “পোড়ামাটি’ নীতির জন্য তাও ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে। অর্থাৎ নবজাতকের জন্ম ঘটেনি সোনার পালংকে, রূপার চামচ মুখে। ঘটেছে খোলা আকাশের নিচে, অপরিসীম দুঃখদুর্দশায়, শত-সহস্য সমস্যার বেড়াজালে। তাই আজ যাঁরা জন্মলগ্নে এই নতুন রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই নিজেদের এই গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। পাকিস্তান এ ব্যাপারে আমাদের সামনে একটি জুলন্ত উদাহরণ। পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্ম-বৃত্তান্ত যা-ই হোক না কেন, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি পাকা-পোক্ত আসন নিয়েই তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। শুরুতে আভ্যন্তরীণ ঐক্যেরও অভাব ছিল না, বৈদেশিক সহায়তারও কমতি ছিল না। রাষ্ট্র হিসাবে এটি ছিল পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তর রাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও মাত্র ২৪ বছরেই তার রাষ্ট্ৰীয় কাঠামো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। কিন্তু কেন ? এ প্রশ্নের জবাব পেতে হলে পাকিস্তানী রাজনীতির দিকে চোখ ফেরাতে হয়। দেশ বিভাগের পর থেকেই পাকিস্তানে অগণতান্ত্রিক গণবিরোধী কায়েমী স্বার্থ চিরস্থায়ী আসন গেড়ে বসে এবং ধাপে ধাপে তা রাজনৈতিক একনায়কত্ব থেকে, আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠীতন্ত্র এবং সর্বশেষ সামরিক হটকারীতায় পর্যবসিত হয়। পাকিস্তান অর্জিত হয়েছিল জনগণের নামে। কিন্তু সেই জনগণের কোন ভূমিকাই থাকেনি পাকিস্তানের রাষ্ট্ৰীয় জীবনে।