পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

423 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ পাক সামরিক চক্রে বিরাট ভাঙ্গন স্বাধীন বাংলা ১৩ নভেম্বর, ১৯৭১ মুজিব নগরঃ ৯ম সংখ্যা পাক সামরিক চক্রে বিরাট ভাঙ্গন আভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে পাক সামরিক চক্রে বিরাট ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে বলে লণ্ডস্থ পাক সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছেন। ঐ মহলের খবরে পাক সামরিক সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করছেন। ঐ মহলের খবরে প্রকাশ পাক সামরিক সরকারের প্রাক্তন বৈদেশিক দপ্তরের সচিব মুহঃ ইউছুফ, ইয়াহিয়া খানের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জনাব আহম্মদ এবং জেনারেল টিক্কা খানের চাপে বাধ্য হয়ে ইয়াহিয়া খান ভুট্টোকে পশ্চিম পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়ে পিকিং-এ দৌত্য করতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সিন্ধুর গভর্ণর গুল রহমান এবং পাঞ্জাবের গভর্ণর মেজর জেনারেল আতিকুর রহমান ইয়াহিয়ার এই সিদ্ধান্তের ঘোরতর বিরোধী। ফলে পর্দার আড়ালে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ক্রমশঃ প্রকট হয়ে উঠছে। ভুট্টোর পিকিং সরকারের সমর্থন সংগ্রহের জন্য সদ্য সমাপ্ত চীন সফরের ফলাফল সম্বন্ধে দুই মহলের অবস্থান দুই মেরুতে। জনাব ভুট্টো বলেছেন তাঁর সফর সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। পক্ষান্তরে সিন্ধু ও পাঞ্জাবের গভর্ণর মনে করছেন ভুট্টো খালি হাতে চীন থেকে ফিরে এসেছেন। তারা আরও বলেছেন, বৃটেন ভারতের প্রতি যেমন প্রকাশ্য সমর্থন জানাচ্ছেন তার ভগ্নাংশ পর্যন্ত চীন সরকার পাকিস্তানের প্রতি জানাচ্ছেন না। পাকিস্তানকে ঢালাও অস্ত্র সাহায্যের জন্য চীনের প্রতিনিধিদের নিকট জনাব ভুট্টো যে করুন আবেদন জানিয়েছিলেন তার প্রত্যুত্তরে চীনের সরকারী প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ভুট্টোকে নাকি বলা হয়েছে যে, অস্ত্র সরবরাহ পশ্চিম পাকিস্তানে না দিয়ে চীন পূর্ববঙ্গে দিতে ইচ্ছুক। ওয়াকিবহাল মহল চীনের উপরোক্ত অভিমত থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে মূল চীনে চিয়াং কাইশেককে প্রদত্ত আমেরিকান অস্ত্র যেমন মাও সেতুং দখল করে বিপ্লবী কৌশল প্রয়োগ করে চিয়াং কাইশেককেই উৎখাত করেছিলেন তেমনি পূর্ববঙ্গে চীন যদি অস্ত্র সরবারহ করে তবে সে অস্ত্র শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পৌছাবে এবং ইয়াহিয়া সরকারের উচ্ছেদের জন্যই ব্যবহৃত হবে। চীনের এই সিদ্ধান্তের গৃঢ় উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ইয়াহিয়া বেশ সতর্ক হয়েছেন। অন্যদিকে আবদুল গফফার খানের পুত্র ওয়ালি খানের জাতীয় আওয়ামী দল উত্ত পশ্চিম সীমান্তে এবং বেলুচিস্তানে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঐ দল ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তের ঘোরতর বিরোধী। সিন্ধু ও পাঞ্জাব দুটো প্রদেশে ভুট্টোর প্রভাব যেমন বেশী তেমনি বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্তে ওয়ালিপন্থী জাতীয় আওয়ামী দলের প্রভাব সর্বজনবিদিত। ফলে সামগ্রিকভাবে ইয়াহিয়া সরকারের অভ্যন্তরে এক ঝড়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সে ঝড় শীঘ্রই উঠবে এবং সিঃসঙ্গ ইয়াহিয়া তার শিকার হতে বাধ্য।