পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

424 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় স্বাধীন বাংলা ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ মুজিব নগরঃ ১০ম ও ১১শ সংখ্যা সম্পাদকীয় একদা এক ব্যঘ্ৰপ্ৰবর বৃদ্ধ ও অর্থব হওয়ায় খাদ্য সংগ্রহে অসমর্থ হইয়াছিল। কিন্তু স্বপ্রচেষ্টায় খাদ্য সংগ্ৰহ করিতে না পারিলে ক্ষুধায় প্রাণ যায়, ফলে সেই ব্যঘ্ৰ তৎকর্তৃক নিহত একব্যক্তির সুবর্ণ কঙ্কনদ্বয় লইয়া এক পঞ্চপল্ল সমাচ্ছন্ন দীঘিকা সংলগ্ন পথিপাশ্বে সাত্বিকভাবে আহার্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে লোভী পথিকের যায়। কিন্তু মনুষ্য সমাজও যে এ ধরনের বহু ভেকধারী হিংস্র শ্বপদের বিচরণক্ষেত্র তাহার উৎকৃষ্ঠতম প্রমাণ বর্তমান ভুট্টো-ইয়াহিয়া সামরিক জান্তা ও তাহদের দালাল বাংলাদেশবাসী মুসলিমপন্থী বাঙালী বিশ্বাসঘাতকের দল। কয়েকদিন পূর্বে মুক্তাঞ্চল ও ফিল্ড হাসপাতাল পরিভ্রমণে গিয়া উপরোক্ত গল্পটি ও পরিণাম পাশাপাশি চোখের সম্মুখে পড়িয়া গেল। মুক্তাঞ্চলের বুকে নেকড়ের ফেউদের রাতের অন্ধকারে ছিটাইয়া যাওয়া একখানি ইস্তাহার একজন গ্রামবাসী আমাদের হাতে দিল। ইস্তাহারে লেখা ছিল-”ইসলাম পাকিস্তানের প্রাণকেন্দ্র” “পাকিস্তান ইসলামের দুর্গ” সেই সঙ্গে ধর্মের জিগির দিয়া বাঙালী মুসলমানদের মার্শাল ল’ কর্তৃপক্ষের নিকট আত্মসমর্পনের জন্য অনুরোধ ও প্ররোচণা। স্বাক্ষর চিল জনৈক আহম্মদ আলি বিশ্বাস, চেয়ারম্যার আলমডাঙ্গা শান্তি কমিটির। সেই শান্তি নিদর্শন পাওয়া গেল বি, ভি, এ, সি ফিল্ড হাসপাতালে। উক্ত অঞ্চলের দুইজন গ্রামবাসী মুক্তিফৌজের ঠিকানা না বলিতে পারায় শান্তি কমিটি চাবুকের আঘাতে সমগ্র পৃষ্ঠদেশের চামড়া তুলিয়া লইয়া এবং সবুট পা-এর লাথিতে পাঁজরার হাড় ভাঙ্গিয়া দিয়া শান্তি নমুনা দেখাইয়াছে। কিন্তু ইহা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নতে। ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা ও তাহার পদলেহী কুত্তার দল মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ডভাবে মার খাইয়া আজ শান্তিবাহিনী প্রচারকের মুখোশ পরিতে বাধ্য হইয়াছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে তাহাদের বাঙালীর তাজা খুনের লোভ স্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে। তাই তাহারা একাধারে প্রচার চালাইতেছে বাংলা শান্ত (?) কেবল মাঝে মাঝে দুষ্কৃতকারী (?) দের অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ চলিতেছে; অপরদিকে যত্রতত্র যখন তখন কারফিউ জারী করিয়া মুক্তিফৌজ গেরিলাদের সন্ধান গৃহে গৃহে তল্লাসী ও জনসাধারণের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাইতেছে। দোসর হইয়াছে শান্তি কমিটির ভেকধারী, বাঙালীর কলঙ্ক মুসলিম লীগ পন্থী ভাড়াটিয়া দালালগণ। শুধুমাত্র প্রশাসনই নহে মুক্তিফৌজের আক্রমণ ও বাঙালীর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অসহযোগিতার ফলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বুনিয়াদও প্রচণ্ডভাবে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। বাংলার অবস্থা সম্পূর্ণ শান্ত ও প্রশাসন সুষ্টভাবে চলিতেছে ইহার প্রমাণ করিতে না পারিলে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র পাকিস্তানকে ঋণ দিতে অস্বীকার করিয়াছ। মুক্তিবাহিনীর নিরলস, বাংলার স্বাধীনতা অর্জন করিবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংগ্রাম ও তৎসহ নৌবাহিনী ও গানবোটের নিশিছদ্র প্রহরার ফলে বিদেশী সাহায্য দ্রব্যসহ কোন জাজাহ পাকিস্তানের বন্দরে যাইতে পারিতেছে না। ফলে বহিঁবাণিজ্য এবং সাহায্য প্রাপ্তির আশা সুদূরপরাহত। কোন বাঙালীর নিকট হইতে তাহারা একটি পয়সাও কর বা খাজনা পাইতেছে না। ফলে ত্ৰাহি ত্ৰাহি রব উঠিয়াছে জঙ্গীশাহী ও তাহার দালালদের মধ্যে। বাঙালীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করিবার জন্য তাহারা নানারূপ ছলনা ও তৎসহ বিনীত প্রার্থনার আশ্রয় লইয়াছে। উক্ত ইস্তাহারে এও লেখা আছে, ”আমাদের একান্ত অনুরোধ আপনাদের ছেলেমেয়ে স্কুল ও কলেজে পাঠাইয়া মজবুত করুন।”