পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

428 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড বাংলাদেশে ও পাকিস্তানের বিভিন্ন সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করিয়া কোন কোন উপনিবেশবাদী প্রভুর উৎসাহে ও প্রেরণায় ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাধাইবার সর্বনাশ খেলায় মাতিয়া উঠিয়াছে। এমনি অবস্থায় একদিকে এক কোটি শরণার্থীর চাপে সৃষ্ট ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা, অন্যদিকে মুরববীদের আশীৰ্বাদপুষ্ট ফ্যাসিষ্ট ইয়াহিয়ার রণহুঙ্কার জনিত উপমহাদেশে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে বিচলিত করিয়া তোলে। তদুপরি কোন কোন বৃহৎ শক্তির বাংলা দেশে ফ্যাসিষ্ট বর্বরতাকে দীর্ঘায়িত করিয়া এবং শরণার্থী সমস্যাকে জিয়াইয়া রাখিয়া উপমহাদেশে বরের পিসি ও কনের ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানী, বেলজিয়াম ও অষ্ট্রিয়া সফরে গিয়া এই সব দেশের সরকার ও জনগণকে বাংলাদেশ সংকটের মূল কারণ এবং শরণার্থী সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব বুঝাইয়া বলিয়াছেন। তিনি এই কথাও স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন যে, বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান করিতে হইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বুঝাপড়া করিতে হইবে- ভারতের সঙ্গে নহে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হইয়াছে। বাংলার বিস্তীর্ন এলাকা এখন মুক্তিবাহিনীর দখলে। তদুপরি রাজনৈতিক সমাধানের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকার চারটি পূর্বশর্ত ঘোষনা করিয়াছেন। উপরোক্ত শর্তের আলোকে শ্রীমতি গান্ধী বৃহৎ শক্তিগুলোকে বাংলাদেশ সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের মূল সূত্র কোথায় তা বুঝাইতে সক্ষম হইয়াছেন বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। পাকিস্তানের যুদ্ধোন্মাদনা ও অব্যাহতভাবে ভারত ভূখণ্ডে গোলাগুলিবর্ষণের মুখে শ্রীমতি ইন্দিরার পাশ্চাত্য দেশ সফরের গুরুত্ব বিশ্ববাসী উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন বলিয়াও আমাদের ধারণা। স্বদেশে ফিরিয়া আসিয়া শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সংকট সমাধানে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রবর্গের মনোভাব সম্পর্কে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা করিয়া বাংলাদেশ প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বলিয়া ওয়াকেবহাল মহলের ধারণা। বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের ৭০ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খার পরিপূরক হিসাবে শ্রীমতি গান্ধী কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাহাই দেখিবার জন্য আমরা সাগ্রহে অপেক্ষা করিতেছি।