পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জয়বাংলা ৮ এপ্রিল, ১৯৭১ ৮ম সংখ্যা বগুড়ার তরুণ মুক্তিফৌজের বীর সদস্যদের সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গলীর পর হইতে “জয় বাংলা” লাখো ছালাম জানাইতেছে। যে রকম বীরত্ব তাহারা প্রদর্শন করিয়াছেন এবং হানাদারদের যেভাবে উৎখাত করিয়াছেন তাহার তুলনা বিশ্বের ইতিহাসে খুব বেশী একটা পাওয়া যাইবে না। একদিকে কয়েকশত মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত শত্রসেনা অপরদিকে মামুলি বন্দুক-রাইফেলে সজ্জিত বগুড়ার বীর তরুণেরা চার পাঁচ দিন বাহিরের কোনরূপ সাহায্য ছাড়াই অবিরাম লড়াইয়ের পর তাহারা বহিরাগত হানাদারদেরকে পশ্চাৎপসরণ করিতে বাধ্য করিয়াছিলেন। কে জানে ঐ একটি ঘটনাই সমস্ত যুদ্ধের মোড় ফিরাইয়া দিয়াছে কিনা। সেইদিন বগুড়ার তরুণেরা যদি মৃত্যুর ভয় করিয়া শত্রদের বাধা না দিত তবে যুদ্ধের গতি কোন দিকে মোড় নিত তাহা বলা কঠিন। আল্লাহর মেহেরবানীতে তাহারা সফলকাম হইয়াছেন। জয় বগুড়ার বীর তরুণ মুক্তিফৌজ! মূল শহরে প্রবেশের মুখে (যাহাকে ১নং ফ্রন্ট বলিব) মাত্র ২৩ জন তরুণ মুক্তিফৌজ কয়েকটি রাইফেল ও বন্দুকসহ বিভিন্ন দালানের ছাদে উঠিয়া হানাদারদের গতি রোধ করিবার প্রথম প্রচেষ্টা চালাইয়াছিল। এই দলেরই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জনাব আসাদুজ্জামানের পুত্র বগুড়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র বিংশ শতাব্দীর তীতুমীর বীর তীতু অন্যান্যদের সাথে ঘন্টাখানেক লড়াই করিবার পর শাহাদাৎ বরণ করে। তাহার সাথে একটি রাইফেল ছিল। তাহার সঙ্গে আর যে ৪ জন ঐ দালানের ছাদ হইতে রাইফেল এবং বন্দুক হইতে শত্রদের উপর অবিরাম গুলিবর্ষণ করিয়া বেশ কিছুসংখ্যক সৈন্যকে ঘায়েল করিয়াছিল, তাহদের আর কোন খোঁজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। দালানটি আমরা দেখিয়াছি। উহা রাস্তার মুখে অবস্থিত। এদেশে শান্তি ফিরিলে বাংলার মানুষ যে শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করিবেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। শহরের অন্য অঞ্চলে (২নং ফ্রন্ট) বগুড়া মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন ওরফে বকুলের নেতৃত্বে বেশ কিছুসংখ্যক তরুণ ও জনতা হানাদারদের বাধা দিবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এক নং ফ্রন্ট অপেক্ষা এই দলে মুক্তি যোদ্ধাদের বেশী ছিল। কিন্তু বন্দুক ও রাইফেলের সংখ্যা ছিল কম। এই ফ্রন্টেও হানাদারদের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াই চলে। এই ফ্রন্টে বীর বকুল একাই একটি ২-২ বোর রাইফেলের সাহায্যে বেপরোয়া এবং অবিরাম গুলিবর্ষণ করিয়া হানাদারদেরকে দেড় ঘন্টা ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন। তৎপরে অন্যান্যরা হানাদারদের ঘিরিয়া ফেলিবার প্রচেষ্টা চালাইলে উহারা কাপুরষের মত পশ্চাৎপসরণ করে। এই ফ্রন্টে সকলেই কিছু কিছুর আড়ালে কভার নিতে সক্ষম হইয়াছিলেন বলিয়া হতাহতের সংখ্যা বেশী নহে। বিশেষ ঘোষণা আল্লাহর মেহেরবানীতে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশেষ করিয়া বাংলা রাইফেল বাহিনীর প্রাণপণ চেষ্টার ফলস্বরূপ গতকল্য দুপুরের আগে রাজশাহী আমরা পুনরুদ্ধার করিয়াছি। শত্রদের ধ্বংস করিয়া ফেলা হইয়াছে। দুই একটি ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া সমস্ত উওরাঞ্চল আমাদের দখলে। এগুলিও ইনশাআল্লাহ অনতিবিলম্বে আমাদের করায়ত্ত হইবে। পূর্বাঞ্চলের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। ঐ অঞ্চলেও মাত্র দুই একটি ক্যান্টনমেন্ট শত্রদের দখলে রহিয়াছে। শত্রদেরকে স্বাধীন বাংলার মাটি হইতে সম্পূর্ণরূপে উৎখাত না করা পর্যন্ত আমাদের সকল প্রকার আরাম হারাম করা কর্তব্য। স্বাধীন বাংলার উওরাঞ্চলের বীর যোদ্ধাদের এবং তাহদের তরুণ