পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

436 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ক্ষতি নিরুপণঃ- পাক সামরিক বাহিনীর বর্বর সেনা, বাংলাদেশের মীরজাফর গোষ্ঠীর দালাল, শান্তি কমিটি ও শেষ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতক বাঙালী রাজাকারের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে যে অকথ্য অত্যাচার, নির্যাতন ও সর্বশেষে ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত তা আজ সর্বজনবিদিত। বাড়ীঘর লুট-পাট থেকে শুরু করে অগ্নিসংযোগ করতে তারা দ্বিধা করেনি। তদুপরি বর্বর বাহিনীর অসংখ্য গোলাগুলির আঘাতে আজ বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল কেন, অধিকৃত অঞ্চলের দিকে তাকালেও, তার পূর্বের স্বরুপ এর অংশও পাওয়া যায় না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আপনার ক্ষতি নিরুপণের দায়িত্ব উক্ত বিভাগের উপর ন্যস্ত করেছেন। তাই অবিলম্বে আপনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে উক্ত বিভাগের গোচরীভূত করুন। ব্যবসা বাণিজ্যঃ- যুদ্ধকালীন অবস্থায় সাধারণতঃ উৎপাদন, আমদানী রপ্তানী ইত্যাদি কাজ প্রায়ই বন্ধ। জনসাধারণ অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া দূরে থাকুক দৈনন্দিন জীবন ধারণের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উচ্চ মূল্য দিয়েও পাচ্ছে না। তাই সরকার জনসাধারণ যাতে ন্যায্য মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেতে পারেন তার একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করেছেন। ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অধিক দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনবেন নাকালোবাজারী বন্ধ করুন। কালোবাজারীকে ধরিয়ে দিন। মনে রাখবেন কালোবাজারী সামাজিক অপরাধী। শত্রদের কোন পণ্য ব্যবহার করবেন না। সংযোগ রক্ষাকারী (বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সহিত):- বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর নিয়মিত সেনা ও গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা রাত দিন ব্যাঙ্কারে, বনে-জঙ্গলে দিন কাটাচ্ছে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য শত্রু সেনাকে খতম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। তাদের এই অগ্রগতির পিছনে আপনাদেরও সাহায্য প্রয়োজন আছে। শত্রু সেনাদের গোপন খবর আপনার নিকটবর্তী মুক্তিবাহিনীর সদর দফতরে অবিলম্বে পাঠিয়ে দিন। করে মুক্তিবাহিনীকে যুদ্ধ জয়ে এগিয়ে দিন। তারা আপনাদেরই ভাই-এ দেশ আপনাদেরই-শত্রকে তাড়াতেই হবে, এই পণ নিয়ে যে যেভাবেই পারেন সাহায্য করুন, এর জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সহিত বেসামরিক সংযোগ রক্ষাকারী-অবিলম্বে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন, এক মুহুর্ত নষ্ট করিবেন না। স্বাধীনতা সংগ্রামের আপনিও একজন সৈনিক। তথ্য ও প্রচারঃ- যুদ্ধকালীন অবস্থায় শক্র সেনাদের গোপন খবর সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিকটে যদি কোন মুক্তিবাহিনীর সদর দফতর না থাকে তা হলে তথ্য ও প্রচার দফতরে সামরিক বিষয়ের গোপন খবরাদি সরবরাহ করুন। গুজব ছড়াবেন না, গুজবে কান দেবেন না। মনে রাখবেন দেওয়ালেরও কান আছে। জনগণের মনোবল বাড়িয়ে তুলুন। স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করুন। কৃষি ও সেচঃ- দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্ত করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন কৃষিজাত দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা। বাংলাদেশের কিছু অংশ এখনও শত্রু কবলিত। অধিক পরিমাণে ধান, পাট ইত্যাদি উৎপাদনে এগিয়ে আসুন। বেসামরিক প্রতিরক্ষাঃ- অসাবধানতাবশতঃ নিরীহ জনসাধারণ যে কোন সময়ে শত্রর শিকার হতে পারেন। অবিলম্বে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের শরণাপন্ন হউন-সাবধানের মার নেই। শিক্ষাঃ- অনভ্যাসে বিদ্যা হাস। অবিলম্বে প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায় চালু করা হবে। মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ এখনও বিবেচনাধীন। ছোট ছোট শিশুরা যাতে বই পুস্তক নাড়াচাড়া করতে পারে তাতে এগিয়ে আসুন। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। ডাক বিভাগঃ- মুক্তাঞ্চলে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সরকার অনতিবিলম্বে ডাক বিভাগ চালু করছেন। বাংলাদেশের নতুন আঙ্গিকের ডাক টিকিট, খাম, পোষ্ট কার্ড জনগনের ব্যবহারের জন্য প্রচার করা হবে।