পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

447 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ ব্যর্থ মনোরথ ভুট্টোর প্রত্যাবর্তন অভিযান ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ১ম সংখ্যা ব্যর্থ মনোরথ ভুট্টোর প্রত্যাবর্তন (অভিযান রাজনৈতিক পর্যালোচক) পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে ৫জন সদস্য বিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদল সম্প্রতি পিকিং সফর করেন। সফর সম্পকে পাক পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্য, অস্ত্র সাহায্য এবং দুদেশের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা বলিষ্ঠতর করার জন্যই এই প্রতিনিধি দলের চীনের রাষ্ট্রনায়কদের সাথে আলাপ আলোচনা। পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য ছাড়াও এই সফরের আরো কতকগুলো সম্ভাব্য দিক আছে। কামান, ট্যাংক আর মেশিনগান দিয়েও যখন বাংলাদেশের আন্দোলনকে রোধ করা গেলো না তখন ইয়াহিয়া খাঁ নয়া ফন্দি আটতে শুরু করে। সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপথগামী করার জন্যে এই সমস্যায় ভারতকে জড়িয়ে ফেলতে সচেষ্ট হয়। আর সে জন্যেই সে ভারতের সাথে যুদ্ধ বাধাবার পাঁয়তারা করে। এই যুদ্ধের হুমকীর পেছনেও জঙ্গীশাহীর দুটো মতলব ধরা পড়ে। ভারতের সাথে যুদ্ধ বাধলে স্বভাবতঃই বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র এসে মধ্যস্থতা করবে। তখন এই বাংলাদেশ সমস্যা চাপা পড়ে তার জায়গায় পাক-ভারত সমস্যা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে আলোচনায় স্থান পাবে। দ্বিতীয়তঃ পাক জঙ্গীশাহী এখন মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত। বাংলাদেশকে যে আর নিজেদের কবলে রাখা যাবে না এব্যাপারেও জঙ্গীশাহীর মনে নেই কোন রকম দ্বিধা। কিন্তু এই মুক্তিবাহিনীর দ্বারা বিতাড়িত হলে খোদ পশ্চিম পাকিস্তানেও সমূহ বিপদ দেখা দেবে এবং এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হলে অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে একমাত্র পথ ভারতের সাথে যুদ্ধ। ভারত যুদ্ধ করলে জঙ্গশাহী পরাজিত হবে সন্দেহ নেই কিন্তু এই পরাজয়ের মধ্য দিয়েও একটা সুদূরপ্রসারী সুফল পাওয়া সম্ভব। ভারতের সাথে যুদ্ধ বাধলে মুক্তিবাহিনী সুযোগের সদ্ব্যবহারে বাংলাদেশকে করবেন শত্ৰকবলমুক্ত। আর জঙ্গশাহী মুক্তিবাহিনীর কাছে এই পরাজয়কে পশ্চিম পাকিস্তানের ভিন্নভাষাভাষী জাতির জনগণকে বোঝাবে ভারতই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। এই ষ্টেশনেই সে পশ্চিম পাকিস্তানকে একত্র রাখতে পারবে। কিন্তু পাকিস্তানের এই উদ্দেশ্য বুঝি সফল হলো না। সীমান্ত যখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ঠিক সেই সময়ে ভারত সোভিয়েট রাশিয়ার সাথে এক পারস্পারিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ভারত রাশিয়া চুক্তির তাৎপর্য উপলব্ধি করেই ইয়াহিয়া খাঁ পিকিং-এ প্রতিনিধিদল পাঠায়। সে চায় ভারত রাশিয়া চুক্তির পাল্টা হিসেবে পাক চীন চুক্তি স্বাক্ষরিত হোক। আর তাহলেই সর্বনাশ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। পিকিং সফরের পিছনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ইয়াহিয়া খাঁর একটি সূক্ষ্ম অভিমানও পরিলক্ষিত। এ অভিমান আর কিছুর জন্যেই নয়, শুধুমাত্র অস্ত্রের জন্যে সবাই হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন যে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিক্সনের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর দীর্ঘ আলোচনার পর নিক্সন সরকার ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তানকে আর অস্ত্র সাহায্য পাঠানো হবে না। এই ঘোষণা যখন ইসলামাবাদে পৌছে, পাক প্রতিনিধি দল