পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

462 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড একই বক্তৃতায় প্রসঙ্গান্তরে ইয়াহিয়া উক্তিঃ “সে (শ্রীমতি গান্ধী) যদি যুদ্ধ চায় আমি তার যুদ্ধ সাধ অবশ্যই মিটিয়ে দেবো” অর্থাৎ পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? কিছুদিন আগেও ইয়াহিয়া বলেছে ‘পাচগুণ বেশী শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া পাকিস্তানের পক্ষে বাতুলতা তবু সেই বাতুল প্রয়াসে কেন জড়িয়ে পড়তে চাইছে পাকিস্তানী জঙ্গীচক্র সেটাই বিবেচ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে একটি স্বীকৃত সত্য সে কথা আজ বৃহৎ শক্তিবর্গসহ পৃথিবীর সকলেই এক রকম মেনে নিয়েছেন। চীনের বিশ্বাসও তা থেকে আলাদা নয় বলেই আমরা মনে করি। পশ্চিম পাকিস্তান এবং পাকিস্তানী জঙ্গী শাসকচক্রও এ কথা জানে। বিশ্বের দরবারে নানাভাবে ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে তাদের সে ধারণা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। তারা জানে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে হবে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে তা থাকতে হবে। টিকিয়ে রাখতে হবে সেনাবাহিনী। পশ্চিম পাকিস্তানে অন্ততঃ অটুট রাখতে হবে শাসন ক্ষমতা। ফলে জঙ্গী সরকার যে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে গোটা পাকিস্তানে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করার সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক বিরুদ্ধমত সোচ্চার হয়ে উঠেছে। গত কিছুকাল থেকে এই বিরুদ্ধমত যাতে দেশব্যাপী একটা জনমত সৃষ্টি করতে না পারে তার অন্যতম প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জঙ্গীচক্র ওয়ালী ও ভাসানী ন্যাপকে রাজনৈতিক দল হিসাবে অবৈধ ঘোষণা করে নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে জনমতের কণ্ঠরোধ বর্তমান পর্যায়ে প্রথম শুরু হলো। কিন্তু অপর দিকে ইয়াহিয়া এখনও বলে চলেছে যে সে জনগণের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন এ ভাঁওতা সে কাকে দিচ্ছে তা অবশ্য অনুমান করা শক্ত। কারণ যত দালালীই করুক ইয়াহিয়ার হাত থেকে গণপরিষদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্ষমতা গ্রহণের সাহস যে কারও হবে এমন মনে হয় না। প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের গণপরিব্যক্ত যাবতীয় দালাল নেতারা এখন পশ্চিম পাকিস্তানই ভীড় জমিয়েছে এবং তারা হয়ত লাশ না হয়ে আর বাংলাদেশে ফিরবে না। পশ্চিম পাকিস্তানে জনমতের কণ্ঠরোধ জঙ্গচক্রের পক্ষে একটা মামুলী ব্যাপার হলেও বর্তমানে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ প্রশ্নে দুটি রাজনৈতিক মতের দ্বন্দ্ব পশ্চিম পাকিস্তানে বেশ ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। একদল এইমত পোষণ করেছিলেন যে বাংলাদেশ যখন ছেড়ে আসতেই হবে তখন আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে মানে মানে সরে পড়া ভাল। কিন্তু ক্ষমতাসীন জঙ্গজোটের ধারণা, তাতে মুখরক্ষা হবে না বলে সেনাবাহিনী ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাবে। কাজেই ৬০ কোটি ভারতের বিরুদ্ধে ৫ কোটি পশ্চিম পাকিস্তানের লড়ে যাওয়াই সর্বদিক দিয়ে সমাচীন। কয়েক দিন যুদ্ধ চালিয়ে গেলে তারপর জাতিসংঘ তা হস্তক্ষেপ করবেই। তখণ বাঙালী সকলে না মরলেও পাকিস্তানী লাঠিটা অন্ততঃ অটুট নিয়ে ফেরা যাবে। ইতিমধ্যে বেপরোয়া বোমাবাজী করে ভারতের সীমান্ত এলাকা এবং শিবিরে শরণার্থী বাঙালীদের বেশ কিছুটা ঘায়েল করা যাবে। এই পরিকল্পনা অনুসারেই পাকিস্তানের জঙ্গীচক্র কাজ করে যাচ্ছে এবং হয়ত দু’চারদিনের ভেতরেই তারা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধই ঘোষণা করে বসবে।