পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

19 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড জন্য পায়নি। বাংলাদেশের উদ্ধৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে পূরণ করা হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের ঘাটতি। কেনা হয়েছে দেশের সেই অঞ্চলের জন্য কলকারখানা ও শিল্পের যন্ত্রপাতি, আর আনা হয়েছে সামরিক অস্ত্রশস্ত্র। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বাঙ্গালীর অর্থে কেনা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আজ নির্বিচারে খুন করা হচ্ছে বাঙ্গালীদের। আওয়ামী লীগ যখনই এসব অন্যায়, অবিচার ও শোষণ বঞ্চনার প্রতিকার দাবী করেছে তখনই তাদেরকে আখ্যায়িত করা হয়েছে ভারতের দালালরূপে, ইসলাম ও সংহতির দুশমনরূপে। তবু নির্ভেজাল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব চেয়েছিলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় সমস্যাবলী সমাধান করতে, কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার তথা দেশের দুই অংশের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করতে। ভাই ভাই হিসেবে একসাথে বাস করতে। কিন্তু বেঈমান ইয়াহিয়া ও তার সামরিক চক্র রুদ্ধ করে দেয় গণতন্ত্রের পথ। গণতন্ত্রের সব পথ বন্ধ হয়ে যাবার পরই শুরু হয়েছে আজকের এই যুদ্ধ। এ যুদ্ধের জন্য বাঙ্গালীরা দায়ী হয়। এ যুদ্ধ ইয়াহিয়া ও তার জঙ্গী চক্রের চক্রান্তেরই ফলশ্রুতি। বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান চেয়েছে। তাই যখনই দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানের সামান্যতম সুযোগ এসেছে তাকে তারা গ্রহণ করেছে সযত্নে। ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের আশা আকাঙক্ষাকে বাস্তবরূপ দানের জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়। যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্ট বাংলাদেশে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে। পরাজিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের দালাল নুরুল আমিন ও তার মুসলিম লীগ দল। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ৯২ক ধারা প্রয়োগ করে ১৪ দিনের বেশী মন্ত্রিত্ব করতে দেয়া হয় না। এরপরে চলে নানা চক্রান্ত। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সাজান হল ডাকাতির মামলাসহ অনেকগুলো মামলা। কথা ছিল ১৯৫৯ সালে সারা পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের শর্তে সেদিন কেন্দ্রে মন্ত্রী সভায় যোগ না দিয়েও ফিরোজ খান নুন মন্ত্রী সভাকে সমর্থন করছিল। কারণ সেদিন বাঙ্গালীরা ভেবেছিল এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের আশাআকাঙ্ক্ষা পূরণের কথা। পশ্চিমা স্বার্থ যখন বুঝতে পারল যে নির্বাচন হলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন চালু হল সামরিক রাজ। সামরিক রাজ মানেই পাঞ্জাবী রাজ। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী সব নেতাদের জেলে পাঠান হল। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকে করা হল বছরের পর বছর কারাবরণ। তাদের অপরাধ ছিল, তারা পাকিস্তানে চাচ্ছিলেন সত্যিকার গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। আর চাচ্ছিলেন বাঙ্গালীদের ন্যায্য অধিকার। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন তার বিখ্যাত ছয় দফা কৰ্যসূচী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে দানা বাধতে থাকে গণ-আন্দোলন। ঢাকার রাস্তায় নিরস্ত্র মিছিলের উপর চলে গুলি। অবশেষে শেখ সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হয় ও কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজান হয় । এই মামলা চলাকালীন সারা দেশে সৃষ্টি হয় বিরাট গণ-অভু্যত্থান। আইয়ুব শাহী বাধ্য হয় তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নিতে। আইয়ুবের জায়গায় আসেন ইয়াহিয়া খান তার নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বুলি নিয়ে। ইয়াহিয়া নির্বাচন দেন জনসাধারণের চাপে পড়ে। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল জয় দেখে শংকিত হয়ে উঠেন ইয়াহিয়া সামরিক চক্র, পশ্চিম পাকিস্তানী আমলাতন্ত্র ও কায়েমী স্বার্থবাদীর দল। নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে শতকরা ৭৯টি পপুলার ভোট পেয়ে ৩১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি দখল করে। আওয়ামী লীগ নিজেকে প্রমাণ করে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলরূপে এবং বাংলাদেশের একমাত্র মুখপাত্ররূপে গণতন্ত্রের সার্বজনীন নিয়মরীতি অনুসারে আওয়ামী লীগেরই ছিল মন্ত্রী সভা গঠন করার, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার অধিকার। কিন্তু সে পথে না গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্র, আমলাতন্ত্র ও কায়েমী স্বার্থবাদীর দল নতুন করে চক্রান্ত শুরু করে বাংলার বিরুদ্ধে। অনেক টালবাহানার পর ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করা হয়। আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলল তার শাসনতান্ত্রিক বিল নিয়ে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী পুঁজিপতিদের দালাল ভুট্টো সামরিক বাহিনীর ইঙ্গিতে দাবী তুললেন জাতীয় পরিষদের বাইরেই শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এটাকে