পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

28 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড প্রয়োজনেই আজ মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এ যুদ্ধে তাদের জয়লাভ করতেই হবে। জয় তাদের অবশ্যম্ভাবী। মাঝখানে মার্কিন সরকার বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষ অবলম্বন না করে চিরকালের জন্য তাদের বন্ধুত্ব হারালেন-এই আমাদের দুঃখ। বৃটেনও একই পথের পথিক। বৃটেন বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দিলো মানবিক মূল্যে কথা। পাকিস্তান আজও কমনওয়েলথের অন্যতম সদস্য। বৃটেনের কাছ থেকে সে পাচ্ছে নানারকম সাহায্য ও সহযোগিতা। সুতরাং বৃটেন সরকার ইচ্ছে করলে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারতো কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকচক্রের সাথে রক্ষণশীল বৃটিশ সরকারের বাণিজ্যিক ও অন্যবিধ সম্পর্ক জড়িত। বৃটিশ শ্রমিক দলের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী হীথ পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তানে বৃটিশ সাহায্য অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমা শক্তিবর্গ ভাবছেন এটা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপার এবং বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদী। ইয়াহিয়া, ভুট্রো ও টিক্কা চক্রের বক্তব্যও এই ভাবখানা এই- বায়াফ্রা, নাগা ও মিজোদের মত বাংলাদেশও একই পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু যুক্তির ধোপে তা কি টিকে? একটু আলোচনা করে দেখা যাক। বায়াফ্রা নাইজেরিয়ার একটি ক্ষুদে অংশ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনের দিক থেকে নাইজেরিয়ার অন্য এলাকার সাথে কোন পার্থক্য নেই। নাগা ও মিজ্যোল্যাণ্ড- ভারতের বিরাট অংশের দুইটি ক্ষুদ্র এলাকা। তাদের দাবীর সংগে বাংলাদেশের বক্তব্যকে এক করে দেখার অর্থ-জেগে ঘুমানোর মত। কারণ, পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ছাপ্পান্ন জনের বাস বাংলাদেশে। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের দূরত্ব বারশত মাইল। মধ্যবর্তী স্থানে ভারত অবস্থিত। ভাষা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধন এবং আচার অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। এবং তথাকথিত পাকিস্তান সংহতির নামে বিগত তেইশ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলাদেশকে শোষণ করেছে, গণতন্ত্রের গলা টিপে হত্যা করে রাজনৈতিক অধিকারটুকুও ছিনিয়ে নিয়েছে। ৫৪ হাজার বর্গমাইল ভূমিকে তারা তাদের বাজারে পরিনত করে। অতএব অর্থনৈতিক মুক্তি, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও মানবিক মূল্যায়নের এই সংগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে অভিহিত করা যায় না।..... বাংলাদেশ যখন ইয়াহিয়ার হায়নাদের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত তখন রেডক্রস এগিয়ে এসেছিলো আর্তের সেবায়, কিন্তু সামরিক জান্তা যেহেতু বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেননি সেহেতু তারা মানবতার সেবা করতে নিরস্ত রয়েছেন। তা নিরস্ত রয়েছেন বলে জঙ্গীচক্রের মানব নিধনযজ্ঞ বন্ধ হয়নি, বন্ধ হয়নি মানবতার ক্ৰন্দন। প্রশ্ন রয়ে যায় রেডক্রসের দায়িত্ব কি শেষ হয়ে গিয়েছে? বিশ্ব জনমতের কাছে তারা এই নগ্নতার বর্বরতার বীভৎস করুণ চিত্র তুলে ধরে বৃহৎ শক্তিবর্গের উপর আশু চাপ সৃষ্টির দাবী করতে পারেন না? আমরা আশা করবো, তারা আর মুখ ফিরিয়ে থাকবেন না। আমরা এতদিন শুনে এসেছি চীন এশিয়ার গৌরব, নির্যাতিত নিপীড়িত সংগ্রামী জনতার আশা-আকাঙক্ষার মূর্ত প্রতীক। বিশ্ববাসী জানতো, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষও জানতো বিশ্বের যেখানেই শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচার সেখানেই আছে মহাচীনের শীতল স্পর্শ। সেখানেই মহাচীন নিপীড়িত মানুষের দুঃখ মোচনের চেষ্টায় সচেষ্ট। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার জীবন যখন জীবন যখন বিপর্যস্ত, তখন চীন আক্রমণকারী হানাদারদের পক্ষ অবলম্বন করছে এটা ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয়। বলা যেতে পারে যে চীনের রাষ্ট্রনায়কগণ বাংলাদেশের গণমানসের সত্যিকার পরিচয় না জেনেই জঙ্গী শাসকদের সমর্থন যোগাচ্ছেন। কিন্তু তাও বা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো? কারণ চীন বিশ্বের নাড়ী-নক্ষত্রের খবর রাখেন তারা সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মুক্তি-সংগ্রামের প্রকৃতি ও পরিচয় জানবেন না তা কোনমতেই বিশ্বাস করা যায় না। অবাক বিস্ময়ে তাকাতে হয় আরব জাহানের দিকে। ইসলামের শিক্ষা যেখানে অন্যায়, যেখানে জালিমের