পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

34 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। হিন্দুদের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান গ্রামও পুড়লো, অগণিত হিন্দুমুসলমান বাঙালী জঙ্গী মেশিনগানের গুলিতে প্রাণ দিল। তার ফলে সারা বাংলাদেশ আজ শ্মশানভূমি। এই অত্যাচার চালানোর জন্যে বর্বর সৈন্য বাহিনী ভয় দেখিয়ে কিছু লোককে গ্রামে গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুঠতরাজের কাজে নিয়োগ করে। এবং সেই অগ্নিসংযোগকারীকে দুষ্কৃতকারী প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ক্যামেরার সাহায্যে তাদের ছবি তুলে নিয়েছে। আবার পরক্ষণেই গুলি করে তাদেরকে হত্যা করেছে। তবু বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে উত্তেজিত হয়নি। ইস্পাতের মত কঠিন একতা নিয়ে অপেক্ষা করছে শত্রর ধ্বংস দেখার জন্য। আজ সর্বত্র সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে নিজেদের এই লুটপাটে নিয়োজিত করেছে, এই সমস্ত জঘন্য অত্যাচারে জর্জতির হয়ে নিরুপায় নিরীহ জনগণ দলে দলে পালিয়ে ভারতবর্ষে যেতে শুরু করে, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকলেই পালাচ্ছে- এতেই প্রমাণিত হয় অত্যাচার এসেছে বাঙালী জাতির ওপর। কোন ব্যক্তিবিশেষ, কোন গোষ্ঠীবিশেষ বা কোন সম্প্রদায় বিশেষের উপর নয়। বহু বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা, খৃষ্টান গীর্জা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত, হিন্দুদের মন্দির, মুসলমানদের মসজিদ কিছুই রেহাই পায়নি এই বর্বর অত্যাচারীদের হাত থেকে। মরেছে। এর কারণ বাঙালীকে নেতৃত্বহীন করে দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যক্ষ ডঃ গোবিন্দ দেব-এর পাশাপাশি পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান জনাব মনিরুজ্জামান এবং অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার পাশে অধ্যাপক মোক্তাদিরও একই হাতের শিকার। তাই দীর্ঘ চবিবশ বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায় অত্যাচারী পাকিস্তান সরকারের অতীত ও বর্তমান রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার এই সাম্প্রদায়িকতা। আজ বাংলাদেশের মুক্তির প্রচেষ্টায় যে ঐক্যবদ্ধ শক্তির বিকাশ ঘটেছে তা বানচাল করার উদ্দেশ্যে প্রতিক্রিয়াশীল জঙ্গী সরকার বাঙালীদের মধ্যে অনৈক্য তারা নতুন করে অত্যাচার শুরু করছে, রাস্তায় রাস্তায় এই সব অবাঙালীরা টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে ইয়াহিয়া সরকারের প্রচার যন্ত্র একথা প্রচার করছে যে, বাংলা ও বাঙালীদের স্বাধিকারের জন্য যারা সংগ্রাম করেছে এবং এই সংগ্রামে যারা সাহায্য ও সহযোগিতা করেছে তারা এবং যেহেতু বাংলার সংখ্যালঘুরা ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক স্বাধিকার সংগ্রামের সাথে একাত্মতা করেছে, কাজেই তারাই পূর্ববাংলার এই দুরাবস্থার জন্য দায়ী। এই ঘৃণ্য অপপ্রচারের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের সর্বত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো। লক্ষ লক্ষ বাঙালী আজ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, এ অবস্থায় যদি পকিস্তানের উস্কানির ফলে কোথাও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে তাহলে পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। তাই এই মুহুর্তে সব থেকে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বাংলার শক্রয়ূণ্য পশ্চিমী কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করা, তাদের কোন প্রকার উস্কানিতে কান না দেওয়া বরং দিনের পর দিন মুক্তি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে নিজেদের তৈরী করা। একথা মনে রাখতে হবে যে কোন স্বাধীনতা যুদ্ধেই সহজে সাফল্য অর্জন করা যায় না। সুতরাং সংগ্রাম যত কঠিন ও দীর্ঘ হোক না কেন তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী থাকতে হবে।