পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

37 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ তোমরা তোমরা জয় বাংলা ২ জুলাই, ১৯৭১ আমরা আমরা ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা সম্পাদকীয় আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা মন্ত্রে দীক্ষিত তার অসংখ্য কর্মী ও সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তথাকথিত পাকিস্তান সরকারের প্রচার যন্ত্রগুলো কতকগুলো বিশেষ বিশেষণ ব্যবহার করে থাকে। সরাসরিভাবে প্রকৃত নাম উচ্চারণ করার বাধা কোথায় আমরা তা বুঝি না। বিশেষণগুলো হলো-দুষ্কৃতকারী, এই বিশেষণগুলোর ব্যবহার পাকিস্তান সরকারের পক্ষে যদি নেহাৎ লজ্জাজনিত হয়ে থাকে আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ বৃদ্ধা স্ত্রীলোকটিকে যখন তার স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তখন লজ্জাবনতভাবে সে বলেছিলো “বিশেষণে সবিশেষ কহিবারে পারি জান হে স্বামীর নাম নাহি ধরে নারী।” সরাসরিভাবে স্বামীর নাম উচ্চারণ করতে ইয়াহিয়া সরকারের যদি বাধে তা হলে আমাদের বলার কিইবা থাকতে পারে। এটা হলো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই বিশেষণগুলোর ব্যবহার যদি ঘৃণাজনিত হয় অথবা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা এবং অগণিত স্বাধীনতাকামী মানুষের নাম বিস্মৃতির অন্তরালে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের অবশ্যই কিছু বলার আছে। ইয়াহিয়া খানের জানা দরকার শেখ মুজিবর শুধু মুক্তি-পাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতাই নয়, শেখ মুজিব কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা ও আবাল বৃদ্ধা বনিতার মুজিব ভাই’। শেখ মুজিব একটি নাম-একটি ইতিহাস এ নামের প্রভাবে একদিকে যেমন সাম্রাজ্যবাদী, সামন্তবাদী আমলাতন্ত্র অন্যদিকে তেমনি বঞ্চিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত সাড়ে সাত কোটি বাঙালী স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসাবে জন্মলাভ করেছে। তার নেতৃত্ব ত্যাগ তিতিক্ষা নির্যাতন ও অগ্নিপরীক্ষায় পরীক্ষিত। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বহু চড়াই- উতরাই পার হয়ে গিয়ে আজ বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার অলৌকিক জনপ্রিয়তা আজ কঠিন বাস্তব। তার অপরিসীম সংগঠনী ক্ষমতা আজ সকল সন্দেহের উর্ধ্বে। মুজিবের আর এক নাম সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের জন্ম হয়েছে মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও দুঃস্থ মানবতার সেবায় নিয়োজিত দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের অঙ্গনে। যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম, পরিস্ফুটন পরিব্যাপ্তি এবং অসাধারণ বিস্তৃতি ঘটেছে নিরলস নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও সাধনার মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে শতকরা সাড়ে আটানববইটি আসন ও শতকরা ৮১ জনের সমর্থন লাভ করা একমাত্র ত্যাগ তিতিক্ষা ও নিষ্কলুষ সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত জনপ্রিয়তার মাধ্যমেই সম্ভব। অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন সশস্ত্র বিপ্লবে রূপান্তরিত হয়ে সুদীর্ঘ ৪৩ বছর লেগেছিল ভারতের স্বাধীনতা লাভ করতে আর ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলন করে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়ে