পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

41 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয়ঃ জাতিসঙ্ঘের জয় বাংলা ৩০ জুলাই, ১৯৭১ মাধ্যমে নয়া চক্রান্ত ১ম বর্ষঃ ১২শ সংখ্যা সম্পাদকীয় জাতিসংঘের মাধ্যমে নয়া চক্রান্ত বাংলাদেশে এবং ভারতের সীমান্তে জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের উদ্ধাস্তু পুনর্বাসন দপ্তরের হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদিন বাংলাদেশের জাতিসঙ্ঘের চল্লিশজন পরিদর্শক পাঠাবার প্রস্তাবও করেছেন। উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়েছে, ভারতে চলে এমন লক্ষ লক্ষ শরণার্থী যাতে নিরাপদে স্বদেশে ফিরে আসতে পারেন এবং তারা পুনর্বাসিত হন তার তদারকি করা। দৃশ্যতঃ প্রস্তাবটি খুবই নির্দোষ ও সাধু। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে দৃশ্যতঃ সাধু ও নির্দোষ প্রস্তাবটির আড়ালে রয়েছে জাতিসঙ্ঘ ও তার প্রধান মুরুব্বি যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন এডমিনিষ্ট্রেশনের নতুন চক্রান্ত। কেবল একটি প্রস্তাব এসেছে তাদের পাকিস্তান ঘেষা এজেন্ট সদরুদিনের মারফৎ গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকারও সঙ্গে সঙ্গে জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক মোতায়েনের সাধু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিছুদিন আগে, জাতিসঙ্ঘের তরফ থেকে বাংলাদেশের উদ্ধাস্তুদের পরিদর্শনের নামে ভারত, পাকিস্তান ও অধিকৃত বাংলাদেশ সফরে এসেও সদরুদ্দিন নানা উল্টাপাল্টা কথা বলে গেছেন। উদ্দেশ্য ছিল সম্ববতঃ তার দোস্ত ইয়াহিয়ার গণহত্যার পাপ যথাসম্ভব কমিয়ে দেখানো। প্রিন্স সদরর দিনের কথা থাক। বাংলাদেশ ও ভারতে জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েন করার প্রস্তাব শুনে অতি দুঃখের মধ্যেও আমাদের একটি পুরনো গল্প মনে পড়েছে। একবার এক সার্জন একজন রোগী দেখে বললেন, এমন কিছু বড় অপারেশন নয়। এখনই তিনি রোগীকে রোগমুক্ত করে দেবেন। ঘটা করে সার্জন রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করলেন। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে কক্ষের বাইয়ে এসে রোগীর রুদ্ধশ্বাস আত্মীয়দের বললেন, “আপনাদের কি বলবো’ অপারেশন অত্যন্ত সাকসেসফুল হয়েছে। তবে দুঃখের কথা এইটুকু যে, রোগী মারা গেছে। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার দসু্যচক্ৰ বেপরোয়া গণহত্যা চালাচ্ছে আজ চার মাস হয়ে গেল। দখলীকৃত বাংলাদেশ এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত। এখানো বাংলার জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংসের কোন সঠিক হিসাব হয়নি। বেসরকারী হিসাবে আশঙ্কা করা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা দশ লাখ, গুরুতরভাবে আহতের সংখ্যা পচিশ হাজার, সাধারণভাবে আহত তিন লাখ, নির্যাতিত নারীর সংখ্যা পনর হাজার থেকে বিশ হাজার। আর বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান নির্বিশেষে শরণার্থী ভারতে ঠেলে দেয়া হয়েছে ৭০ লাখের উপরে। এই পৈশাচিক ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড যখন চলছিল, তখন বাংলাদেশের নেতারা বার বার জাতিসঙ্ঘ ও বৃহৎ রাষ্ট্রবর্গের কাছে মানবতা ও বিশ্বশান্তির নামে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, এই শিশুঘাতী ও নারীঘাতী বর্বরতা বন্ধে সক্রিয় হোন, বাংলাদেশে মানবতার স্বার্থে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ চাই। জাতিসঙ্ঘ কোটি কোটি মানুষের এই বিপন্ন আর্তনাদে কান দেননি। আর বৃহৎ রাষ্ট্রবর্গের মধ্যে আমেরিকা জাহাজ বোঝাই করে অস্ত্র পাঠিয়েছে এই অস্ত্র নিরীহ ও নিরস্ত্র নর-নারী হত্যার কাজে লাগানো হবে এই তথ্য জেনেও। এই দীর্ঘ চার মাস পরে যখন ইয়াহিয়া চক্রের ধ্বংসযজ্ঞ প্রায় সমাপ্ত হয়ে এসেছে, তখন জাতিসঙ্ঘ কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে চান কি প্রয়োজনে? সেখানে স্তুপিকৃত মৃতদেহের সংখ্যা গুনতে? ধ্বংস্তুপে পরিণত দখলীকৃত বাংলাদেশে জাতিসংঘের তথাকথিত ত্রাণকার্যের মহড়া দিতে? হ্যা, তাতে জাতিসঙ্ঘের ত্রাণকার্যের অপারেশন অবশ্যই সাকসেসফুল হবে, কিন্তু রোগী