পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

49 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড অবলম্বনের জন্য অনেক চেষ্টা তদ্বির করা হয়েছে। চেষ্টা করেছেন স্বয়ং ঘাতক বিচারক ইয়াহিয়া। অনেক চেষ্টা তদ্বিরের পর জনাব ব্রোহী মামলা পরিচালনায় স্বীকৃত হয়েছেন। আহা কি নাটক! কি উপাদেয় নাটক শেখ মুজিব দ্ব্যর্থহীন কষ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, আমার বিচার করার কোন এখতিয়ার ইয়াহিয়ার নেই। কিসের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কি অধিকার ইয়াহিয়ার আছে, তাকে এ অধিকার কে দিয়েছে? এর পরও জনাব এ কে দ্রোহীকে নাকি শেখ সাহেবের পক্ষে মামলা পরিচালনায় নিযুক্ত করা হয়েছে এবং তিনি তার মক্কেলের সাথে আলোচনার জন্য এক অঘোষিত স্থানে রওয়ানা হয়ে গেছেন। সে স্থানের নাম তিনি প্রকাশ করবেন না কারণ তিনি গোপনতার শপথ পাঠ করেছেন ইয়াহিয়ার কাছে। ঘাতক যে শেখ সাবেককে অপরাধী বলে পূর্বেই রায় দিয়ে ফেলেছে, যার প্রচারযন্ত্র অহরহ শেখ বিরোধী বিষ ছড়িয়ে ঝালিয়ে যাচ্ছে সেই করে নিয়েছেন। ইয়াহিয়া তোমাদের হাজারো গ্রামের গুহায় এ জাতীয় বিচারের প্রহসন হতে পারে-কিন্তু সভ্যতার আলো বাতাসে উদ্ভাসিত আজকের বিশ্বে এ জাতীয় মধ্যযুগীয় বিচারের প্রহসন অকেজো। ইয়াহিয়া তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে পরকীয়া প্রেম করে তোমার সাদামী বেহেস্ত প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রত্যাবর্তনের পর তোমার হুমকীর কাছে যে মাথা নোয়াবার শিক্ষা পায়নি তা তুমি এবং তোমার জেনারেলরা ইতিমধ্যেই নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছে। মিঃ ব্রোহী মামলায় কার পথ অবলম্বন করবেন? শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে কি অভিযোগের জবাব তিনি দেবেন এবং কার কোর্টে? বিশ্ব জনমতের আদালতে শেখ মুজিব একটি মাত্র অপরাধ করেছেন এবং তা হলো প্রধানমন্ত্রীর পদকে বড় করে দেখেননি। জনতার নদী রক্ত আর অশ্রু গঙ্গার সাথে নিজেকে একাত্ম করে নিতে সূক্ষ্মতর বিলম্ব করেননি। এই অপরাধে যদি শেখ সাহেবের বিচার হয় তা হলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকেও বিচারের কাঠগড়ায় উঠাতে হবে। কারণ শেখ মুজিব আজ ব্যক্তি নয়, সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর নাম শেখ মুজিব মুজিব মানে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী কষ্ঠ বাঙালী-প্রাণ বাঙালী আবেগ। ইয়াহিয়া তোমার ক্ষমতাদপী সেনারা একটি জাতিকে কি নিশ্চিহ্ন করতে পারবে? পারবে না। হিটলার পারেনি। আইখম্যানদের গ্যাস চেম্বারও একদিন টায়ার্ড হয়ে পড়েছিল।