পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ সপ্তম খন্ড দলিল প্রসঙ্গঃ পাকিস্তানী দলিলপত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র সংকলনে পাকিস্তান পক্ষের দলিল নিয়ে এই খন্ড প্রকাশ করা হল। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের যেমন সংগ্রাম ছিল, তেমনি এই সংগ্রাম নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীও ছিল তৎপর। স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের দলিলাদি অন্যান্য খন্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধকে প্রতিহত করবার এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পরিবর্তে পুরানো পাকিস্তান রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা অটুট রাখবার জন্য পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও তাদের সহযোগীরা নমাস ধরে যে কার্যকলাপ চালায় সে সম্পর্কিত দলিলপত্র এই খন্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সব দলিল দুটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে; যথা সরকারী ও বেসরকারী। প্রথম অধ্যায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক দুটি অংশে বিভক্ত। সরকারী দলিলপত্র : কেন্দ্রীয় অংশে জেনারেল ইয়াহিয়ার ভাষণসমূহ সামরিক আদেশ জারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার-প্রহসন, বাংলাদেশের দ্বারা প্রণীত শাসনতন্ত্র প্রদান, বাংলাদেশে পাক সামরিক জান্তার অধীন বে-সামরিক পুতুল সরকার গঠন, প্রহসনমূলক উপনির্বাচন অনুষ্ঠান; এবং যুদ্ধ ঘোষণা, পরিচালনা ও আত্মসমর্পণ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বহির্বিশ্ব ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণা, বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সরকারী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে প্রতিনিধিদল প্রেরণ, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের আহবান সম্পর্কিত দলিলপত্রও এখানে স্থান পেয়েছে। এই অংশের শেষে একটি পরিশিষ্টে, বিশেষ করে বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, প্রচারিত শ্বেতপত্র সহ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত কয়েকটি প্রচার-পুস্তিকাও মুদ্রিত হয়েছে। ‘সরকারী দলিলপত্র : প্রাদেশিক অংশে সামরিক গভর্নর লেঃ জেনারেল টিক্কা খান ও পূর্বাঞ্চলের জিওসি আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালী জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক কার্যক্রম গ্রহণ ও আইন জারী, বিভিন্ন দন্ড ও শাস্তি বিধান, জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ও বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা, শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা, কুইসলিং সরকারের গভর্নর ও মন্ত্রীদের বক্তৃতা-বিবৃতি-তৎপরতা, প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠান এবং শেষে পাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্বমুহুর্তে কুইসলিং সরকারের একযোগে পদত্যাগ বিষয়ক উপাত্তসমূহ বিন্যস্ত হয়েছে। এই খন্ডের দ্বিতীয় অধ্যায় বেসরকারী দলিলপত্র। এটিও দুটি অংশে বিভক্ত: রাজনৈতিক বিবৃতি এবং বেসামরিক সহযোগিতা। পাকিস্তানের যে সমস্ত রাজনৈতিক দল বা নেতা জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক কার্যক্রম সমর্থন করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে, সংগঠন ও জোটবদ্ধ হয়ে বিভিন্নভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাদের সেসব কর্মকান্ড এ অধ্যায়ের প্রথমাংশে বিধৃত হয়েছে। সামরিক জান্তার অভিপ্রায় অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের তৎপরতা নির্মুল করে অখন্ড পাকিস্তান রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ সংগঠন- শান্তি কমিটি এবং রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস প্রভৃতি বাহিনীর গঠন ও তৎপরতার দলিলাদি বেসামরিক সহযোগিতা অংশে সন্নিবেশিত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলসমগ্রের একটি খন্ড হিসেবে এটি পাঠের সময় অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন যে, পাকিস্তানের সামরিক সরকার বা পাকিস্তানী পক্ষ কখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্বীকার করেনি। তাই তারা স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সমাজবিরোধী ও নাশকতামূলক তৎপরতা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দুষ্কৃতকারী ভারতের চর ও অনুপ্রবেশকারী ; নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সদস্যদেরকে ভারতের দালাল ও বিচ্ছিন্নতাবাদী, শরণার্থীদেরকে উদ্বাস্ত্ত ; স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি বিদেশী রাষ্ট্র ও সংগঠনের সমর্থনকে কেন্দ্রীয় রুপে আখ্যায়িত করেছে।