পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

214 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড চতুর্থতঃ বর্তমানে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য গণচীন কুটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালানোর ক্ষমতা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন যাবৎ পাকিস্তান পাক-ভারত বিরোধ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের যথার্থতা বিবেচনা করছে এবং এ ব্যাপারে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সেক্রেটারী অবশ্য জানান যে, অবিলম্বে নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত বিরোধের প্রশ্ন উত্থাপনের কোন বিকল্প নেই। যাহোক চীন যেহেতু শীঘ্রই নিরাপত্তা পরিষদে বসবে এবং যেহেতু কোন না কোন বৃহৎ শক্তি অথবা সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত উপমহাদেশের কাজেই প্রতিনিধিদলটি পিকিং-এ অবস্থানকালে স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যাপারে আলোচনা করবে। প্রতিনিধিদলটির গঠন প্রকৃতি এই মর্মে আভাস বহন করছে যে, পাক-ভারত বিরোধের সামরিক ও কুটনৈতিক দিকসহ সকল বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ আলোচনার ইচ্ছা রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কমান্ডারদের অন্তর্ভুক্তি তাৎপর্যপুর্ণ বলে গণ্য হচ্ছে। এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধিদলটি চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা করবেন। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জানান যে, প্রতিনিধিদলটি চীনে কয়েকদিন অবস্থান করবেন। প্রতিনিধি দলটিকে যেরূপ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন করে গঠন করা হয়েছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেটির প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ও চীনের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসুচী রয়েছে। মুখপাত্রটি প্রেসিডেন্ট একটি প্রতিনিধিদলকে পিকিং-এ প্রেরণ করেছেন। পিকিং থেকে এএফপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে, প্রতিনিধি দলটির এই আকস্মিক পিকিং সফর পাক-ভারত সীমান্তের উত্তেজনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক বছর আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পিকিং সফরের পর এটাই গণচীন সফরকারী বৃহত্তম পাকিস্তানী প্রতিনিধি দল। উক্ত খবরে আরো বলা হয় যে, পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো মন্ত্রী থাকাকালে কয়েকবার পিকিং সফর করেছেন। ৬ বছর আগে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রাক্কালে তিনি শেষবারের মতো পিকিং সফর করেন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ পিপলস পার্টির নেতা জনাব ভুট্টো বর্তমানে কোন সরকারী পদে অধিষ্ঠিত নেই। এখানে পর্যবেক্ষকরা বলেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিরোধ এবং পুর্ব পাকিস্তানে তথাকথিত বাংলাদেশ বিদ্রোহের প্রতি জনাব ভুট্টো কঠোর মনোভাবাপন্ন মহলের সমর্থক বলে মনে হয়। উক্ত খবরে বলা হয় জনাব ভুট্টো এমনি এক সময়ে পিকিং সফর করছেন, যখন ১৯৬২ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে তিক্ত চীন-ভারত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে চীন অথবা ভারত কোন পক্ষই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গত সপ্তাহে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের জাতিসংঘভুক্তিতে অভিনন্দন জানিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী ও অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই-এর অভিনব কুটনৈতিক অস্ত্র টেবিল টেনিসকেও চীন-ভারত সম্পর্কোন্নয়নে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় টেবিল টেনিস দল পিকিং-এ আফ্রো-এশীয় বন্ধুত্বমূলক টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করছে।