পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

383 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড প্রেসিডেন্ট আরো প্রকাশ করেন যে, ১৯৭০ সালের ৩১শে মার্চ নাগাদ একটি আইন কাঠামো এবং জুন মাস নাগাদ ভোটার তালিকা তৈরী করে ১৯৭৩ সালের ৫ই অক্টোবর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে। জাতীয় পরিষদকে তার প্রথম অধিবেশন থেকে শুরু করে ১২০ দিনে মধ্যে একটি শাসনতন্ত্র তৈরী করতে হবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁরা যদি এই কাজ সম্পন্ন করেন তাহলেও আমি সুখী হবো। কিন্তু তাঁরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং আবার নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি আশা করি এবং কামনা করি যেনো তা না ঘটে এবং এ জন্যই আমি ভবিষ্যৎ গণপ্রতিনিধিদের পূর্ণ দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমের সঙ্গে এই কাজ হাতে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ১৯৭০ সালের পয়লা জুন সারাদেশে সাধারণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী অভিযান শুরু হয়। এই সময় প্রেসিডেন্ট সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ এবং ব্যক্তিগত ও স্থানীয় বিবেচনার উর্ধ্বে ওঠার জন্য সব দলের প্রতি আবেদন জানান। সংবাদপত্র, রেডিও টেলিভিশনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়। সব সরকারী কর্মচারীকেই পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কড়া নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯৭০ সালের ২৮শে মার্চ জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি আরেকবার আপনাদের আশ্বাস দিতে চাই যে, যতদূর পর্যন্ত নির্বাচনী অভিযানের সম্পর্ক রয়েছে, বর্তমান সরকার আগেও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। সরকার অবশ্য আশা করেন যে, কোন রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তি পাকিস্তানের আদর্শ ও সংহতি বিরোধী প্রচারণা কিংবা কার্যকলাপ চালাবেন না।” একই ভাষণে প্রেসিডেন্ট আইনকাঠামো আদেশ (১৯৭০)-এর মুল ধারাগুলো ঘোষণা করেন। এই আদেশের ভিত্তিতেই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেন। এই “আইনকাঠামো আদেশ’-এর উপক্রমণিকায় বলা হয় যে, জাতীয় পরিষদের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে “এই আদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরী করা।” আদেশের ১৪ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়, “জাতীয় পরিষদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরীর কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট তাঁর বিবেচনা মতো উপযুক্ত তারিখ, সময় ও স্থানে পরিষদের অধিবেশন ডাকবেন।” আরো ঠিক করা হয় যে, জাতীয় পরিষদ তার প্রথম অধিবেশনের ১২০ দিনের মধ্যে “শাসনতন্ত্র বিল” নামে একটি বিলের আকারে শাসনতন্ত্র তৈরী করবেন এবং তা করতে ব্যর্থ হলে পরিষদ ভেঙ্গে যাবে। জাতীয় পরিষদের পাশ করা শাসনতন্ত্র-বিল প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ না করা পর্যন্ত জাতীয় পরিষদ ফেডারেশনের প্রথম আইন পরিষদ হিসেবে তার কাজ শুরু করতে পারবেন না এবং প্রাদেশিক পরিষদগুলোর অধিবেশনও ডাকা হবে না। ফেডারেল শাসনতন্ত্র তৈরীর একটা ঐতিহাসিক রীতি এই যে, শাসনতন্ত্রের পেছনে হয় ফেডারেটিং ইউনিটগুলোর সর্বসম্মত সমর্থন কিংবা ফেডারেটিং ইউনিটগুলোর বেশীর ভাগের সম্মতি থাকতে হবে। এটাই বোঝাতে চাওয়া হয়েছিলো প্রেসিডেন্টের নিম্নোক্ত মন্তব্যে। “শাসনতন্ত্র হচ্ছে একটা পবিত্র দলিল এবং একত্রে বসবাসের মৌলিক চুক্তি। কোন সাধারণ আইনের সঙ্গে তার তুলনা করা চলে না।” আইন-কাঠামো আদেশে শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করার কতকগুলো মূলনীতি দেয়া হয়। এসব মূলনীতির भट्क्षा क्लिश्3 (১) “জনসংখ্যা এবং প্রাপ্ত-বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর পর ফেডারেল ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের অবাধ প্রত্যক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ অনুসরণের নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।” (২) “নাগরিকদের অধিকার বিধিবদ্ধ করা হবে এবং এই অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা বিধান করা হবে।”