পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

395 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড (১) কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উজীর-সভা গঠন। (২) জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহকে ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রের অধীনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দান। (৩) সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ও সামরিক বিচারালয় ইত্যাদির বিলোপ সাধন। কিন্তু আইনগত শূন্যতা যাতে ঘটতে না পারে, সে জন্য প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ বহাল থাকবে। শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দূরীকরণের প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ও শেখ মুজিবুর রহমানের সংগে সাক্ষাতের জন্য তিনজন পশ্চিম পাকিস্তানী নেতা সেইদিন ঢাকা পৌছলেন। এই নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন- কাউন্সিল মুসলিম লীগের মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা ও সর্দার শওকত হায়াত খান এবং জমিয়তে উলেমায়ে ইসলামের মওলানা মুফতী মাহমুদ। ২০শে মার্চ, ১৯৭১ আওয়ামী লীগ জয়দেবপুর সামরিক সরবরাহ বহনকারী একটি কনভয়কে বাধা দিয়ে এবং চট্টগ্রামে পাকিস্তানী জাহাজ “এম ভি, সোয়াভ' এর চলাচল ব্যাহত করে যে সাংঘাতিক উস্কানীকে প্রশ্রয় দিলো- তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট তাঁদের সংগে রাজনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রাখলেন। বেলা ১০টায় প্রেসিডেন্টের সংগে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। প্রেসিডেন্টের সংগে ছিলেন তাঁর উপদেষ্টাবৃন্দ। শেখ মুজিবুর রহমানের সংগে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মুশতাক আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান ও ডক্টর কামাল হোসেন। প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্পষ্টভাবে জানালেন যে শামিত্মপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে কোন পরিকল্পনা নীতিগতভাবে গৃহীত হওয়ার পূর্বে সে বিষয়ে সকল রাজনৈতিক নেতার দ্ব্যর্থহীন ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তাহলেই তিনি কোন পরিকল্পনার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা মত প্রকাশ করলেন যে, কোন দলিলের বলে সামরিক আইনের সম্পূর্ণ বিলোপ সাধান করে জেনারেল এ,এম, ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদবী ও ক্ষমতাবলী গ্রহণ করলে- সে দলিলটির কোন আইনগত বৈধতা থাকবে না। প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব ও তাঁর সহকারীদের কাছে ব্যাখ্যা করলেন যে, প্রস্তাবিত ঘোষণাটির পেছনে কোন আইনগত বৈধতা থাকবে কিনা তা আইন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের মতের সমর্থনে একজন শাসনতান্ত্রিক বিশেষজ্ঞকে (জনাব এ কে ব্রোহী) পেশ করার ভার নিলেন। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাবৃন্দ ও শেখ মুজিবের সহকারীদের মধ্যে পরবর্তী আলোচনার জন্য নিম্নলিখিত নীতিগুলো গৃহীত হলোঃ ১. সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে। ২. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উজীর-সভা গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. পূর্ব ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতাও থাকতে হবে। ৪.পূর্ব পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানকে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ৫. এই সব ব্যবস্থার বাস্তবায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে আরও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। একথা উল্লেখ করা হলো যে, যে দলিলটির দ্বারা এইসব ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কার্যকরী করা হবে, সে দলিলটি জাতীয় পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ রাখতে হবে। এটা আইনগত প্রয়োজন। শেখ মুজিবুর রহমান এতে সম্মত হলেন না।