পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

396 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড সেইদিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে জারী করার উদ্দেশ্যে একটি ঘোষণার খসড়া প্রস্তুত করা হলো। প্রস্তাবিত দলিলটি যাতে একটি সামরিক আইনবিধির আকারে জারী না করা হয়, এটা আওয়ামী লীগের দাবী ছিলো। আওয়ামী লীগের এই দাবী পূরণের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টের ঘোষণার খসড়া প্রস্তুত করা হলো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধানের জন্যও খসড়া ঘোষণাটিকে একটি মৌখিক দলিল হিসেবে গণ্য করা হবে বলে সাব্যস্ত করা হলো। এই ধরনের একটি ঘোষণার কোন আইনগত বৈধতা থাকবে কিনা, এই মূল প্রশ্নটি আওয়ামী লীগের শাসনতান্ত্রিক বিশেষজ্ঞের সংগে আলোচনার পর নির্ধারণ করা হবে বলে স্থির করা হলো। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আইনগত বৈধতাসূচক প্রশ্নটির সমাধানসাপেক্ষ, খসড়া ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত প্রধান বিষয়গুলো ছিলোঃ (১) প্রাদেশিক উজীর-সভার সদস্য যেদিন শপথ গ্রহণ করবেন, সেইদিন থেকে ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চের সামরিক আইন ঘোষণা বাতিল বলে গণ্য হবে। (২) ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর, ১৯৬৯ সালের ৪ঠা এপ্রিলের অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশ অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য পাকিস্তানের শাসনতন্ত্ররুপে গণ্য হবে। (৩) ঘোষণা জারী হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে যিনি প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন, অন্তর্বতীকালীন সময়েও তিনিই প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। (৪) প্রেসিডেন্ট হবেন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রধান। ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রের সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশের বিধানসমূহের আওতায় তিনি প্রেসিডেন্টের সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন ও কর্তব্য পালন করবেন। ১৯৬২-এর শাসনতন্ত্রকে এরপর ‘প্রাক্তন শাসনতন্ত্র’ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। (৫) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলসমূহ থেকে সদস্য বাছাই করে একটি কেন্দ্রীয় উজীর সভা গঠন করা হবে। (৬) প্রাক্তন শাসনতন্ত্রের অধীনে জাতীয় পরিষদের দায়িত্বসমূহ, আইন কাঠামো আদেশে উল্লিখিত জাতীয় পরিষদ কর্তৃক পালিত হবে। (৭) প্রাক্তন শাসনতন্ত্রে সন্নিবিষ্ট তৃতীয় তফশীলে উল্লিখিত সমস্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের নিরংকুশ ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের হাতে। তবে এ ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম থাকবে। এ সম্পর্কে সীমারেখা ও পরিবর্তন স্থির করা হবে। তৃতীয় তফশীলে আইন প্রণয়নে কেন্দ্রের নিরংকুশ ক্ষমতা ও কেন্দ্রীয় বিষয়সমূহের তালিকা আছে। (৮) প্রাক্তন শাসনতন্ত্রের অধীনে প্রাদেশিক পরিষদের দায়িত্বসমূহ, আইন কাঠামো আদেশের অধীনে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণ কর্তৃক পালিত হবে ও পরে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিষদ কর্তৃক আইন প্রণয়নের ব্যাপারে যে ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই অনুসারে, যেসব বিষয়ে আইন প্রণয়নে জাতীয় পরিষদের ওপর সীমারেখা আরোপ করা হবে সেই সব বিষয়ে আইন প্রণয়নের অতিরিক্ত ক্ষমতা থাকবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের হাতে। (৯) প্রেসিডেন্ট প্রদেশের পার্লামেন্টার গ্রুপসমূহের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রাদেশিক গভর্নর নিযুক্ত করবেন। প্রেসিডেন্ট যতদিন গভর্নরের প্রতি তুষ্ট থাকবেন, ততোদিন পর্যন্ত গভর্ণর তাঁর পদে বহাল থাকবেন।