পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

399 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় প্রেসিডেন্টের সহকারীবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ টিমের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডক্টর কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের পক্ষে তাঁর তৈরী করা একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেশ করেন। আওয়ামী লীগ টীমকে বলা হয় যে, বর্ধিত উত্তেজনা এবং পরিস্থিতির চাপের পরিপ্রেক্ষিতে এবং পিপিপি ও জাতীয় পরিষদের অন্যান্য দলের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন বিধায় আগের খসড়া ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতেই আলোচনার অগ্রগতি হওয়া উচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ টম এ কথা মানতে অস্বীকার করেন। আওয়ামী লীগ টীমকে বলা হয় যে, তাঁরা ইচ্ছে করলে মূল খসড়াটিতে আরো কিছু যোগ করা কিংবা তাতে রদবদলের প্রস্তাব করতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ কথাও মেনে নেননি। এই পরিস্থিতে আওয়ামী লীগের খসড়াটি পরীক্ষা করে দেখা শুরু করা হলো এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আলোচনা স্থগিত করা হলো। তারপর একটি সান্ধ্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিচে বর্ণিত বিষয়সমূহ আলোচনা করা হলোঃ (১) আইনগত বাধ্যবাধকতা হচ্ছে যে, এই ধরনের যে কোনো ঘোষণা সামরিক আইন প্রত্যাহারের আগে জাতীয় পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত। (২) আওয়ামী লীগের খসড়ায় বলা হয় যে,একটি প্রদেশে গভর্নরের শপথ গ্রহণের তারিখেই সেই প্রদেশ থেকে সামরিক আইন উঠে যাবে এবং ঘোষণার তারিখের পর ৭ দিন পার হলে সারা পাকিস্তান থেকে সামরিক আইন উঠে যাবে। স্মরণ রাখতে হবে যে, গভর্নরকে বরখাস্ত করা যাবে না। আওয়ামী লীগকে বলা হয় যে, এতে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এবং সামরিক আইন যদি প্রত্যাহার করতে হয় তাহলে যে তারিখে সব প্রদেশের প্রাদেশিক উজীররা শপথ নেবেন সে তারিখে সামরিক আইন প্রত্যাহার করাটাই সঙ্গত হবে। (৩) দেশের দুই অংশের জাতীয় পরিষদ সদস্যদের পৃথক পৃথক কমিটি গঠন-সংক্রান্ত যে ধারণাটি আগের ঘোষণার ছিল তা আওয়ামী লীগের নতুন খসড়ায় সংশোধন করে বলা হয়, “বাংলাদেশ রাজ্য এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজ্যসমূহ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্যরা শপথ নেবেন এবং “বাংলাদেশ” রাজ্য ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজ্যসমূহের জন্য শাসনতন্ত্র তৈরীর উদ্দেশ্য তাদেরকে নিয়ে পৃথক পৃথক শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন গঠন করা হবে।” আওয়ামী লীগ টীমকে বলা হয় যে, এর অর্থ হচ্ছে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদকে পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এই দুই জাতীয় পরিষদে ভাগ করা এবং ফলতঃ তা বিচ্ছিন্নতার এক শাসনতান্ত্রিক ফর্মুলা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। (৪) আওয়ামী লীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় যে, জাতীয় পরিষদ সদস্যদের যে শপথ নেয়ার কথা ছিল তাঁরা তাও বদলেছেন। আইন কাঠামো আদেশ যার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং যার অধীনে পরিষদের অধিবেশন ডাকার কথা তার ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে একটি শপথ দিয়ে দেয়া হয়েছে। শপথটি এইঃ “আমি সর্বান্তকরণে শপথ করছি (বা, ঘোষণা করছি) যে, আমি পাকিস্তানের প্রতি সত্যিকারভাবে বিশ্বস্ত ও অনুগত থাকবো এবং যেসব কর্তব্য সম্পাদনের ভার আমি নিতে যাচ্ছি তা আইন কাঠামো আদেশ, ১৯৭০এর ধারাসমূহ ও এই আদেশে বর্ণিত পরিষদের আইন-কানুন অনুসারে এবং সব সময়ই পাকিস্তানের অখণ্ডতা সংহতি কল্যাণ ও সমৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রেখে সততা, আমার সর্বোত্তম যোগ্যতা এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করবো।”