পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

400 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড আওয়ামী লীগের খসড়ার ১৭ (৫) অনুচ্ছেদে যে শপথ দেয়া হয় তা এই “আমি সর্বান্তঃকরণে শপথ (ঘোষণা) করছি যে আমি আইন বলে গঠিত পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের প্রতি বিশ্বস্ত ও সত্যিকারভাবে অনুগত থাকবো।” (১) প্রেসিডেন্টের টীম আওয়ামী লীগ টমের সঙ্গে তাদের খসড়ার একটি ধারার মারাত্মক তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন। এই ধারায় বলা হয় যে, পরিষদ “পাকিস্তান কনফেডারেশন’-এর জন্য একটি শাসনতন্ত্র তৈরি করবেন। আওয়ামী লীগ টীমকে স্পষ্ট করে বলা হয় যে, কনফেডারেশনের মানে হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের একটি জোট এবং এই কনফেডারেশনের ধারণা ‘আইন কাঠামো আদেশ’ এবং আওয়ামী লীগের নিজেরাই “৬ দফা”র বিরোধী কারণ, “আইন কাঠামো আদেশ” এবং ৬ দফা দুটোতেই সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তান একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র হবে। (২) আওয়ামী লীগের খসড়ার ১৭ (৭) অনুচ্ছেদে বলা হয়, “প্রেসিডেন্টের কাছে শাসনতন্ত্র বিলটি পেশ করা হলে তিনি তা অনুমোদন করবেন এবং যেকোন অবস্থায় বিলটি পেশের তারিখের পর ৭ দিন অতিক্রান্ত হলেই মনে করা হবে যে প্রেসিডেন্ট তা অনুমোদন করেছেন।” আওয়ামী লীগ টমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় যে এই ধারাটি আইন কাঠামো আদেশের পরিপন্থী এবং এতে করে LFO-তে যে ৫টি শাসনতান্ত্রিক মূলনীতির কথা বলা হয়েছে তার পরিপন্থী একটা শাসনতন্ত্র তৈরীর সম্ভাবনা দেখা দেবে। আওয়ামী লীগের খসড়ার আর্থিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়েও আলোচনা করা হয়। আলোচিত প্রধান বিষয়গুলো হচ্ছেঃ (০১) আওয়ামী লীগ খসড়ায় ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রের তৃতীয় তালিকার ৪৯টি বিষয়ের পরিবর্তে ১২টি বিষয়ের নাম ছিল। এর অর্থ এই ছিল যে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই ১২টি বিষয়ই হবে কেন্দ্রীয় বিষয় এবং বাদবাকী সব বিষয়ই হবে প্রাদেশিক বিষয়। (০২) এমন কি তৃতীয় তালিকার এই ১২টি বিষয়ের ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব করেন যে, আওয়ামী লীগ খসড়ায় তৃতীয় তালিকার প্রথম নম্বরে শুধু লেখা ছিল “পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা”। ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রে এই বিষয়ের অধীনে ৫টি উপবিষয় ছিল। আওয়ামী লীগ টীমকে বলা হয় যে এই বিষয়ের অধীনে রয়েছে সামরিক, নীে ও বিমানবাহিনীর কারখানাসমূহ, প্রতিরক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পসমূহ, অস্ত্র উৎপাদন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকাসমূহের কর্তৃত্ব প্রভৃতি। (০৩) বৈদেশিক বিষয়াদি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ব্যবস্থা ছিল, “বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য বাদ দিয়ে বৈদেশিক বিষয়াদি।” এক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ খসড়ায় ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রের ৭টি উপ-বিষয় বাদ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ টীমকে বলা হয় যে তাঁরা বৈদেশিক বিষয়াদির সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্যের সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের প্রকাশ্যে ভাবে ঘোষিত নীতিকে পরিবর্তন করেছেন। আওয়ামী লীগ টীম বিদেশে আলাদা আলাদা বাণিজ্য প্রতিনিধি নিয়োগেরও প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগ খসড়ার ১৪ (১) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় বিষয়সমূহের বিবেচনা ছিল। এতে বহু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাদ দেয়া হয়েছিল। বাদ দেয়া জিনিসগুলোর মধ্যে ছিলঃ (১) এতে কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন কিংবা কেন্দ্রের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চাকরিসমূহ বা পদসমূহের কোন উল্লেখ ছিল না।