পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

406 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড যশোরে ডেপুটি কমিশনারের অফিসে জনতা পাকিস্তানের পতাকার অবমাননা করে এবং পুড়িয়ে দেয় এবং একটা হাতবোমা নিক্ষেপ করে। খুলনায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আক্রমণ করে কিছুসংখ্যক কৰ্মচারীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকার ধানমন্ডি ও নবাবপুর রোড থেকে বেশকিছু লুটতরাজের খবর পাওয়া যায়। একটা অস্ত্রের দোকান আক্রমণ করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাওয়া হয়। ৫ই মার্চ, ১৯৭১ চট্টগ্রাম থেকে হত্যা এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবার খবর পাওয়া যায়। খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকায় ৭ জন লোককে হাতবোমা, দা এবং বর্শা দিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মৃতদেহ খণ্ড-বিখণ্ডিত অবস্থায় পাওয়া যায়। খুলনা শহরে লাঠি ও বন্দুক নিয়ে জনতা একটি হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রদেশের অভ্যন্তরের অন্যান্য এলাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, ব্যাপক গোলযোগ ছড়িয়ে পড়েছে ও সারা প্রদেশের বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পঙ্গু হয়ে পড়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্য টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, টেলিফোন ও টেলিগ্রাম বিভাগের কর্মচারীরা বার্তা গ্রহণ ও প্রেরণ বন্ধ করে পূর্ব পাকিস্তানকে বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ৬ই মার্চ, ১৯৭১ ১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ই মার্চের রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্ররা বৃটিশ কাউন্সিল ভবনে ঢুকে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন জুলিয়ে দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু সময় মতো সেনাবাহিনী পৌছায় এবং গুলী ছুড়ে অবস্থা আয়ত্তে আনে। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে ৩৪১ জন কয়েদী পালিয়ে যায়। পুলিশ গুলী ছোড়ার ফলে ৭ জন কয়েদী নিহত হয়। ১ জন পুলিশ সার্জেন্ট এবং ৬ জন ওয়ার্ডার আহত হয়। পরে পলায়নকারী কয়েদীরা আওয়ামী লীগ উগ্রপন্থী এবং ছাত্রদলের সহযোগিতায় মারাত্মক শ্লোগান দিতে দিতে ঢাকার রাস্তাগুলো প্রদক্ষিণ করে। আওয়ামী লীগ এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কর্মীরা এসিড এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ সংগ্ৰহ করার জন্য বিজ্ঞান গবেষণারগারগুলো লুট করা শুরু করে। ঢাকায় সরকারী বিজ্ঞান গবেষণাগার থেকে সব বিস্ফোরক রাসায়নিক লুট করে নেয়া হয়। এই একই উদ্দেশ্য পলিটেকিনক ইনস্টিটিউটও আক্রমণ করা হয়। যখন গুলী ছোড়া হয়, তখন গুণ্ডারা পালিয়ে যায়। কুমিল্লা ও যশোরসহ পূর্ব পাকিস্তানের সব প্রধান প্রধান শহর থেকে বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ ট্রেনিং কোর’-এ ১০টা রাইফেল এবং ১৫ টি বেয়নেট চুরি হয়। চট্টগ্রামে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ চলতেই থাকে। দুটো দালান এবং কিছুসংখ্যাক কুঁড়েঘর পোড়ানো হয়। আড়াল থেকে অতর্কিতভাবে গুলী ছোড়ার ঘটনাও বেশ কয়েক জায়গায় ঘটে। রাজশাহীতে সদর ম্যাজিষ্ট্রেটের অফিসে আগুন লাগানো হয়। খুলনায় জাতি এবং রাষ্ট্রবিরোধী শ্লোগান দিতে দিতে বিক্ষুব্ধ মিছিলসমূহ অস্ত্রের দোকানগুলো লুট করার চেষ্টা করে। দোকানের মালিক গুলী ছোড়ার ফলে ১ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়।