পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

408 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড লন্ডন ডেলী টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক কেলিথ ক্লার্ক-এর পাঠানো একটি বিবরণ ১৯৭১ সালের ৯ই মার্চ উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, খবরে প্রকাশ যে রোব্বার ৭ই মার্চ রাতে যখন শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশকে বিচ্ছিন্নতাবাদের শেষ প্রান্তে এনে ফেলেছিলেন তখন ঢাকা সম্পূর্ণভাবে অরাজকতার কবলে গিয়ে পড়েছিলো।” উক্ত পত্রিকায় আরও বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ তাঁর আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ বলে নাম দিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে সহযোগিতা করার জন্য এমন সব শর্ত আরোপ করেন, যা প্রেসিডেন্ট খানের পক্ষে মেনে নিওয়া সম্ভব ছিলো না। এ পত্রিকায় শেখ মুজিবুর রহমানের আর একটি নির্দেশেরও উল্লেখ ছিলো নির্দেশটি ছিলো- গ্রামে গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে মুক্তি কমিটি গঠন করা।” ১০ই মার্চ, ১৯৭১ আওয়ামী লীগ ঘোষণা করলো যে “ব্যাংকের লকারগুলোর কাজ বন্ধ থাকবে” এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশের বাইরে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো সহযোগিতা করবেন না। কুমিল্লার চা বাগানে গোলযোগ ও সন্ত্রাসের খবর পাওয়া গেলো। ১২ই মার্চ, ১৯৭১ ১১ই-১২ই মার্চ রাতে বরিশালের জেল ভেঙ্গে কিছু কয়েদী পালিয়ে যায়। বগুড়ার জেল ভেঙ্গে ৭ জন কয়েদী পালিয়ে যাবার খবরও পাওয়া যায়। কুমিল্লায় ৩০০ কয়েদী পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পুলিশ গুলী চালায়। পুলিশের গুলিতে ২ জন কয়েদী নিহত ও ১৮ জন কয়েদী আহত হয়। ‘মুক্তি ফ্রন্ট’ এবং আধা সামরিক সংস্থাগুলি প্রদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ‘মুক্তি ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে ‘সাইক্লোস্টাইলড’ এবং হাতে লেখা প্রচারপত্র গোপনে গোপনে বিলি করা হলো। এ সবেরই উদ্দেশ্য ছিল জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং হিংসাত্মক কার্যকলাপে উস্কানিদান। ৫টি সামরিক ট্রাকের একটি দল রেশন নেবার জন্য কুমিল্লা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সশস্ত্র জনতা কর্তৃক আক্রান্ত হয়। ১৩ই মার্চ, ১৯৭১ ঢাকার রেল ষ্টেশনে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবীরা যাত্রীদের ঘেরাও করে পশ্চিম পাকিস্তানের দালাল বলে অভিযুক্ত করে জেরা করতো। কাকরাইলের কাছে এক সরকারী অফিসে দুই বোতল এসিড নিক্ষেপ করা হয়। ফলে সে অফিসে আগুন ধরে যায়। উত্তোলন করা হয়। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতারা দুজন কয়েদীর মুক্তির জন্য জেল ভাঙ্গার হুমকি দেয়। উল্লেখিত কয়েদী দুজনকে জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলার জন্য শমসের নগরে গ্রেফতার করা হয়। ১৪ই মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবুর রহমান পূর্বের সব নির্দেশগুলো বাতিল করে দেন এবং ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চ থেকে নতুন নির্দেশ সম্বলিত এক কার্যক্রম ঘোষণা করেন। এর একটি নির্দেশে বলা হয় যে, ডেপুটি কমিশনার এবং মহকুমা হাকিমগণ তাদের নিজ নিজ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে স্ব স্ব পর্যায়ে আওয়মী লীগ সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবেন এবং সহযোগিতা করে কাজ করবেন।