পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

409 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড আর একটি নির্দেশে বলা হয় যে, ’’কাষ্টম বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করে যাবে এবং যে পরিমাণ কর ধার্য করা হয়েছে তা পুরো জমা দেয়া হলে মাল বের করতে অনুমতি দেবে। এই উদ্দেশ্য ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড এবং ইষ্টার্ন মার্কেনটাইল ব্যাংক লিমিটেড (বেসরকারী ব্যাংক) এ কাস্টমস কালেক্টর দ্বারা পরিচালিত বিশেষ একাউন্ট খুলতে হবে। কাস্টমস কালেক্টরগণ আওয়ামী লীগের মাঝে মাঝে প্রকাশিত নির্দেশ অনুযায়ী এই একাউন্টগুলো পরিচালনা করবেন। এইভাবে যে কর আদায় হবে সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের একাউন্টে জমা করা হবে না। ১৫ই মার্চ, ১৯৭১ এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৪ জন সদস্য স্বীকার করেন যে, গাড়ী নিয়ে কিছু দুস্কৃতিকারীরা বিভিন্ন বাড়ীঘর এখনও লুটপাট করছে এবং সংগ্রাম পরিষদের নামে জোরজবরদস্তি করে টাকা আদায় করছে। কিছু সংখ্যক এলাকা থেকে খবর আসছিলো যে, ঢাকার বিভিন্ন আওয়ামী লীগ তল্লাশী ফাঁড়ি জাতিগত এবং রাজনৈতিক কারণে যে তল্লাশী চালাচ্ছে তাতে জনসাধারণ কুমিল্লায় এক সশস্ত্র জনতা ফেনীর একটি আর্মি ফিল্ড ইউনিট ঘেরাও করে আক্রমণ চালায়। ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চে লন্ডন-এর বিবিসির খবরে বলা হয়ঃ আজ কাজে যোগ দেবার জন্য যে সামরিক হুকুম আজী হয়েছে, তা অমান্য করার জন্য বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীদের অনুরোধ জানিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান একটি বিবৃতি দেন। শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চান। তিনি প্রদেশের উপর কর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে তিরিশেরও বেশী নির্দেশ জারী করেছেন। এই নির্দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত একিট আদেশ হচ্ছে যে, কর কেন্দ্রীয় সরকারকে না দিয়ে তার সরকারকেই দিতে হবে। ১৬ই মার্চ, ১৯৭১ রাজশাহীতে নাটোরের মহারাজ হাইস্কুল থেকে রাসায়নিক দ্রব্য এবং এসিড চুরি হয়। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবকরা একটি অস্ত্রশস্ত্রের দোকান লুট করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় সংবাদদাতা মার্টিন এডেনির পাঠানো এক রিপোর্টে আওয়ামী লীগের একটি সংগ্রাম কমিটির বৈঠকের বর্ণনা দেয়া হয়, সারা প্রদেশে গঠিত এ ধরণের অন্যান্য কমিটির মতো এই কমিটিরও আলোচনার বিষয় ছিলঃ তাদের বিবেচনায় ইতিমধ্যেই স্বাধীন হয়ে যাওয়া পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ বাংলাদেশে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। ৫৮টি গ্রাম থেকে প্রায় শ তিনেক লোক এই সংগ্রাম কমিটিতে একত্রিত হয়েছে। তারা প্রয়োজনবোধে সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত এবং এ জন্য তারা এমন একজন গ্রামবাসীর কাছে ট্রেনিং নিচ্ছে, যুদ্ধবিদ্যা যার একমাত্র অধিকার, সে রাজকীয় ভারতীয় সেনাবাহিনী সার্ভিস কোরে একজন ল্যান্স কর্পোরাল ছিলো। হিন্দুস্তানের দৈনিক পত্রিকা ষ্টেটসম্যান (১৯৭১ সালের ১৬ই মার্চ সংখ্যা) আওয়ামী লীগের ১৪ই মার্চ বলেছেন যে, তিনি বাংলাদেশ’-এর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছেন।” পত্রিকা আরো জানায়, “শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আমাদের অতিথি হবেন। ঢাকায় পর্যবেক্ষকরা এর এই অর্থ নিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্তান নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বতন্ত্র একটি এলাকা বলে মনে করে।”