পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

411 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ২৩শে মার্চ, ১৯৭১ পাকিস্তান দিবসের নাম পরিবর্তন করে প্রতিরোধ দিবস’ করা হয়। ঢাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য শহরে বিভিন্ন সরকারী ভবনের চূড়ায় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের নয়া পতাকা উড়তে দেখা যায়। মুক্তিফ্রন্টের আধা সামরিক বাহিনী এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মচারীদের মার্চ পাষ্ট এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুসারে ঢাকা টেলিভিশন এই দিন পাকিস্তানী পতাকা প্রদর্শন করেনি। মিরপুর এবং অন্যান্য কয়েকটি এলাকার অধিবাসীরা নয়া বাংলাদেশ পতাকা উড়াতে অস্বীকার করে। পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে এসব জায়গায় তাদের উপর হামলা চালানো হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে সশস্ত্র মার্চ পাষ্টে সালাম গ্রহণ করেন। এখানেও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন ছাত্রদল পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে এবং মুক্তিপণ দাবী করে। সশস্ত্র জনতা ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে বহির্গামী যাত্রীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং তাদেরকে হয়রানী করে। ২৪শে মার্চ, ১৯৭১ যুদ্ধংদেহী ছাত্র এবং শ্রমিকরা জনগণকে হিংসাত্মক কাজের উস্কানি দিয়ে প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় হাতে লেখা এবং সাইক্লোষ্টাইল করা প্রচারপত্র বিলি করা শুরু করে। পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের জেলা কমিটি ঐ ধরণের একটি প্রচারপত্র বিলি করে, যাতে লেখা ছিলঃ “পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এগিয়ে চলছে। এই দাবানলকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন। দেশপ্রেমিক বিপ্লবী জনগণ। হাতিয়ার তুলে নিন। শত্রুসৈন্যকে বাধা দিন এবং তাদেরকে নির্মুল করুন। সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে মুক্ত এলাকাগুলো রক্ষা করুন।” “দেশবাসী বন্ধুগণ! হাতের কাছে যে অস্ত্র পানা তাই হাতে তুলে নিন এবং শক্রদের অগ্রগতি বন্ধ করুন। যে সব জায়গা শক্রদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেসব জায়গার সড়ক, সেতু রেলযোগাযোগ প্রভৃতি বিচ্ছিন্ন করে দিন। ঘরে ঘরে হাত বোমা ও মলোটোভ বোমা (Monoltov Cocktail) প্রস্তুত রাখুন। যদি আমাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে হয় কিংবা আমরা শক্ৰকর্তৃক আক্রান্ত হয়ে পড়ি তাহলে আমাদেরকে রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করতে হবে। “মনে রাখবেন, পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি কেবল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে, যার জন্য দীর্ঘ সময়ও প্রয়োজন হতে পারে। কাজেই গেরিলা যুদ্ধ কৌশল ছাড়া আমরা শক্রদের প্রতিহত করতে সক্ষম হবো না, যে কোনো মূল্যে মুক্ত এলাকাগুলো রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। পূর্ব বাংলার দীর্ঘ সংগ্রাম শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়নি, বরং এটাই কেবল শুরু। আমাদেরকে দূর্বল করার জন্য শক্ররা অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করতে পারে। পূর্ব বাংলার জয় অবশ্যম্ভাবী। আমরা পাকিস্তানী উপনিবেশের জিঞ্জির ছিড়ে ফেলবো। স্বাধীন পূর্ব বাংলা জিন্দাবাদ।” রংপুরে উত্তর সৈয়দপুরের গোলাহাট থেকে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। লাঠি, সড়কি অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ৮ হাজার লোকের এক উন্মুক্ত জনতা সৈয়দপুর অভিমুখে যাত্রা করে সেখানকার অধিবাসীদের উপর আক্রমন করার জন্য ৫০টি বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলে ব্যাপকভাবে এসিড বোমা তৈরীর খবর পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের সর্বত্র ব্যারিকেড এবং বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।