পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

461 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ১৪৫। জেনারেল টিক্কা খানের বেতার দৈনিক পাকিস্তান ১৯ এপ্রিল, ১৯৭১ ভাষণ জেনারেল টিক্কা খানের বেতার ভাষণ জাতীয় ক্ষতির প্রতিবিধানে এগিয়ে আসুন গভর্নর লেঃ জেনারেল টিক্কা খানের বক্তৃতার পূর্ন বিবরণঃ প্রিয় ভাইসব, আচ্ছালামু আলাইকুম । দেশকে খণ্ডবিখণ্ড হওয়া থেকে এবং পরিণামে ভারতীয় দাসত্বের কবল থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালনের জন্যেই সেনাবাহিনীকে আহবান করা হয়েছিল । অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ এমন এক পথ ধরেছিলো যাতে কিনা বহু ত্যাগের বিনিময়ে এই উপমহাদেশের থেকে প্রতিষ্ঠিত মুসলমানদের আবাস ভূমি আমাদের এই দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেত। পাকিস্তান সৃষ্টিতে অগ্রগামী ভূমিকা গ্রহণকারী পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানগণ এই দেশকে টিকিয়ে রাখতে দৃঢ়সংকল্প । স্বল্পসংখ্যক লোক প্রকাশ্য হিংসা ও আক্রমণাত্মক তৎপরতার দ্বারা জানমাল বিপন্ন করে তুলে বেশীর ভাগ মানুষের কণ্ঠরোধ করেছিল । যার ফলে আওয়ামী লীগ ধ্বংসাত্মক পথ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল । রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, যারাই আওয়ামী লীগে ছিল তারাই জাতির সংহিত ও অখণ্ডতার বিরোধী | যারাই পাকিস্তানের মঙ্গল চান তারাই জাতির সংহতি ও অখণ্ডতার বিরোধী। যারাই পাকিস্তানের মঙ্গল চান তাদের ভয় করার কোন কারণ নেই । আমি তাদের এগিয়ে আসার, অন্যদের সাথে যোগ দেওয়ার এবং জাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার আহবান জানাচ্ছি। সশস্ত্রবাহিনী, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল ও পুলিশের কিছু লোক কর্তব্যস্থান ছেড়ে গেছে। এদের কেউ কেউ ছুটিতে ছিল এবং আর কাজে যোগ দেয়নি, কেউ কেউ পরিবার পরিজনের জন্য উদ্বেগের কারণে তাদের ইউনিট ছেড়ে গেছে । আবার কেউ কেউ উচ্চাকাঙ্খী নীতিজ্ঞানশূন্য সিনিয়রদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছে। যারা নিজেদের ইউনিটে পুনরায় যোগদান করবে এবং যারা দুষ্কৃতকারী ও দেশের শত্রদের পরিত্যাগ করে নিকটবর্তী হবে। আমি তাদের এই সুযোগ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি। অন্যথায় তাদের সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করা হবে। ১ লা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত সরকারী কর্মচারীগণ অফিসে যেতে পারেননি । কারণ তাদের জীবন ও তাদের পরিবার-পরিজনের জীবন বিপন্ন হয়েছিল । যে পরিস্থিতিতে তাদের কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে, আমি তা পুরোপুরি অনুধাবন করি। এখন যেহেতু দুষ্কৃতকারী ও ফ্যাসিষ্টদের দমন করা হয়েছে এবং শান্তি বিরাজ করছে, তাদের সর্বান্তকরণে অকুণ্ঠচিত্তে অকুতোভয়ে জাতি ও দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করা উচিত । সশস্ত্রবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা অনুপ্রবেশকারী, দুষ্কৃতকারী, সমাজবিরোধী ও জাতিবিরোধী লোদের ধ্বংস সাধনে দৃঢ়সংকল্প । আমি সকল নাগরিকদের এরূপ লোকদের আশ্রয় না দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন । আমরা জানমালের হানি এড়াতে চাই। কিন্তু কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকের বাড়ীতে ও শহরে আশ্রয় নিয়ে সেনাবাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করছে। এর ফলে অনেক নির্দোষ লোককেও কষ্ট পেতে হচ্ছে এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দুষ্কৃতকারীরাই দায়ী। তাদের আশ্রয় দেবেন না। খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং আরো খাদ্য আসছে। কিন্তু খাদ্য চলাচল যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে পড়বেন । দুষ্কৃতকারীরা যাতে খাদ্য চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে, তার নিশ্চয়ত বিধান করা জনসাধারণের কর্তব্য এবং এ কাজে আমি প্রত্যেকের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করি। পরিশেষে আমি এই আশ্বাস দিতে চাই, সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক জনগণের সহায়তায় দেশকে রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কর্তব্য পালন করবে।