পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

535 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতির মূল কারণ এটা নয় যে খাদ্যদ্রব্যের অনটন রয়েছে। আসল সমস্যা হোল, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অসুবিধা, আর তার কারণ হোল প্রদেশে সাম্প্রতিক গোলযোগের ফলে রেলগাড়ী ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অসুবিধা। বন্দর থেকে খাদ্যসামগ্রী প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিতরণ কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে। গোলযোগের আগে শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশী খাদ্যদ্রব্য রেলগাড়ীর সাহায্যে পাঠানো হোত। যেহেতু পূর্বের তুলনায় বর্তমানে রেল ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে সেহেতু বেশীর ভাগ খাদ্যসামগ্রী নৌযানের সাহায্যে পাঠানো হচ্ছে। এই ব্যাপারে বন্ধুরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে চীন ও করেছেন। খাদ্য সরবরাহের কাজে এই অতিরিক্ত ব্যবস্থার ফল হবে এই যে, চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরগুলিতে সরবরাহের পরিমাণ ৩ গুণ বেড়ে যাবে। এর ফলে চট্টগ্রাম থেকে চলাচলের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো সম্ভবপর হবে। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করবার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে ট্রাক আমদানীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা বলা হচ্ছে যে, খাদ্যশস্যের সরবরাহ থাকলেও অনেকের পক্ষে ক্রয় করার ক্ষমতা থাকবে না। সরকার এই সমস্যা সম্পর্কেও সচেতন রয়েছে। এবং ইতিমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে টেষ্ট রিলিফের কাজ শুরু করা আয়ের পথ সুগম করে দেওয়া হচ্ছে যাতে তাদের কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হয়। ইতমধ্যে এই কাজের খাতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এবং প্রয়োজনবোধে আরো টাকা দেওয়া হবে। বর্ষার শেষে গ্রামাঞ্চলে ওয়ার্কস প্রোগ্রামের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যার জন্য বাজেটে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, এই টেষ্ট রিলিফের কাজ তার অতিরিক্ত। গত কয়েক মাসের ঘটনাবলীর ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বড় রকম ক্ষতিসাধন হয়েছে। মার্চ মাসে সকল প্রকার অর্থনৈতিক কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল এবং তারপরে ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পূর্ণোদ্যমে চালু করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে বহু পন্থা অবলম্বন করেছে এবং এর ফলে অনেকটা উন্নতিও দেখা দিয়েছে। বড় বড় কারখানাগুলির উৎপাদন ক্ষমতাও বর্ধিত হচ্ছে। বন্দরগুলিও স্বাভাবিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জুন ও জুলাই মাসে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর থেকে মোট ১৮ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার মাল রফতানী করা হয়েছে। গত বৎসর এই সময়ে মোট ২৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকার মাল রফতানী করা হয়েছিল। সুতরাং তুলনামূলকভাবে দেখতে গেলে এই বৎসরের রফতানীর পরিমাণ নেহাৎ খারাপ নয়। ব্যাংকগুলি পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালোভাবেই চলছে। সুতরাং দেশের অর্থনীতি ক্রমে ক্রমে আগের পর্যায়ে ফিরে আসবে। এ প্রসঙ্গে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণের জন্যে প্রদেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর পুনরুজ্জীবন আমার সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। সরকারের এই প্রচেষ্টায় আমি প্রদেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। জরুরী মেরামত ও পুনর্বাসন কার্যের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সরকার ইতিমধ্যেই তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছে। এই কাজের জন্য এই বৎসরের বাজেটে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রদেশের উৎপাদন শক্তিকে বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন খাতে যে ২৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, এই ১৫ কোটি টাকা তার অতিরিক্ত বরাদ্দ। ঢাকায় অবস্থিত উচ্চ ক্ষমতাবিশিষ্ট একটি বোর্ডের অধীনে সৃষ্ট তহবিল পুনর্গঠনের জন্য বরাদ্দকৃত এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। আশু মেরামত পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের সকল প্রস্তাব অনুমোদনের সম্পূর্ণ ক্ষমতা এই বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।