পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

548 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড দৈনিক পাকিস্তান ১৮ অক্টোবর । ময়মনসিংহের জনসভায় গভর্নর মালিক ভারতীয় হুমকি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান ময়মনসিংহ, ১৭ ই অক্টোবর (এপিপি)। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাঃ এ এম মালিক আজ জনসাধারণকে সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক ও অবিভাজ্য শক্তি নিয়ে ভারতীয় আক্রমণের হুমকি মোকাবিলায় আহবান জানান। তিনি স্থানীয় সার্কিট হাউস ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। গবর্ণর বলেন, কে কতটা দোষী একথা বলার সময় এটা নয়। এখন শক্র দেশের সংহতি বিনাশে উদ্যত। অন্য সব স্বার্থকে ভুলে এমন সব কিছুর ওপর দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নকে স্থান দিতে হবে । পাকিস্তানই যদি না থাকলো তবে বাঁচবে কে এবং পাকিস্তান থাকলে কেউ মরবে না। ভারতের পূর্ব পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অভিসন্ধির মুখোশ উদঘাটন করে ডাঃ মালিক বলেন, পাকিস্তানের সৃষ্টিকে স্বীকার করতে না পারার দরুনই ভারত এগুলো করছে। পশ্চিম বঙ্গে ক্ষুধা, দারিদ্য ও ভেঙ্গে পড়া অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত এই অঞ্চলকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে বলে গভর্ণর উল্লেখ করেন । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনকি এখনো পশ্চিম বঙ্গের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং খাদ্য সস্তা দরে পাওয়া যায় । গবর্ণর একটি কঠোর বাস্তব দিকের প্রতি বিপথগামী লোকদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি তাদের একথাটা ভেবে দেখতে বলেন যে, যখন পশ্চিম বাংলার লোকেরা দিল্লীর হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছে না তখান পূর্ব পাকিস্তানীদের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, বাংলা বলতে পশ্চিম বঙ্গ, পূর্ব বঙ্গ উভয়কেই বুঝায়। তাই বাংলা যদি স্বাধীন হয় তাহলে তাতে পশ্চিম বঙ্গও থাকা উচিৎ ৷ অতএব দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের নামে পূর্ব বাংলাকে ভারতের সাথে যুক্ত করার জন্যই এ আন্দোলন । এই মুহুর্তে প্রত্যেক পাকিস্তানীকে তিনি যেখানেই থাকুন, ভারতের এই খেলা বুঝে নিতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটাকে ব্যর্থ করে দিতে হবে । উদ্দীপ্ত জনতাকে উদ্দেশ্য করে গবর্ণর বলেন, বিশ্বসঘাতকেরা পেছন থেকে ছুরি না মারা পর্যন্ত মুসলমান কখনো কোন যুদ্ধে হারেনি। যারা কথায় এবং কাজে শত্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে গবর্ণর আশা প্রকাশ করেন । এই প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীন বাংলার প্রবক্তাদের মীরজাফরের ভাগ্যের কথাটা একবার স্মরণ করতে বলেন । তিনি জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, ক্লাইভ ও অন্যান্যরা তাকে বাংলার মসনদে বসানোর অঙ্গীকার করেও তা পালন করেনি। তাই তিনি তাদের এই ঐতিহাসিক সত্য অনুধাবনের এবং দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেন। রাজাকারদের উদ্দেশ্য করে গবর্ণর বলেন নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে তাদের কাজ করে যেতে হবে । বাইরের শত্রদের প্রতিরোধ করা ছাড়াও তাদের সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে । গবর্ণর শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করেন এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন । তিনি শান্তিকমিটির সদস্যদের কয়েকটি সুপরিশ আগ্রহ সহকারে শোনেন।