পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

556 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড আসার জন্য খুবই আগ্রহী ও মরিয়া হয়ে উঠেছে কিন্তু ভারতের প্রচারণার মাধ্যমে যে সব বিদ্বেষপূর্ণ হীন প্রচারণা চলছে। তথা আরও নানা রকম বাধা সৃষ্টির দরুন তারা তাদের বাড়ী ঘরে ফিরতে পারছে না। মন্ত্রী বলেন, তিনি তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারেন যে ভারত সর্বদাই উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে । তিনি আরও জানান যে, হিন্দু ও মুসলমানদের প্রতি দু- রকম ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও তিনি দেখেছেন । তিনি নিজে স্ত্রী পুত্রসহ প্রায় দু’মাসকাল যে ক্যাম্পে অবস্থান করছেন, সেটা ছাড়াও আগরতলা, বেলেনিয়া ও অন্যান্য স্থানের শিবির তিনি পরিদর্শন করে তা প্রত্যক্ষ করেছেন। এসব ক্যাম্পের সাধারণ অবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন যে, এসব ক্যাম্পের অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর । লোকজনদের স্বল্প পরিসরে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে । খাদ্য সরবরাহও খুবই অনিয়মিত । চিকিৎসার এমএনএদের একটা মাত্র সুবিধা দেওয়া হয়, তা হলো একটা ছোট্ট ঘরে তাদের দু- তিনজনকে একটা খাটিয়ার উপর একত্রে থাকতে দেয়া হয়। অন্যদের নিজেদেরই তাদের ব্যবস্থা করে নিতে হয়। জনাব মজুমদার বলেন যে, ভারতে অবস্থানকালে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ঢাকা জেলার প্রায় ৩০ জন এমএনএ ও এমপিএ- এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয় । তিনি এদের সকলকেই হতোদ্যম ও আতংকগ্ৰস্ত দেখতে পান । কলকাতাসহ পশ্চিম বঙ্গের অপরাপর অংশে যে সব এমএনএ ও এমপিএ অবস্থান করছেন, তাদের অবস্থাও একইরুপ । আমি সেখানে শুনেছি যে, তারাও পাকিস্তানে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে । ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সকল বাধা সৃষ্টি করছে বলে তিনি জানান। জনাব মজুমদার বলেন যে, তিনি নিজে প্রথম সুযোগ গ্রহণ করেই পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি সব সময়েই পাকিস্তানী ছিলাম, সর্বদাই পাকিস্তানী এবং কখনই পাকিস্তান বিরোধী নই। তবে গোলযোগের সময় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তথায় আশ্রয়গ্রহণে বাধ্য হই। তবে তথায় থাকাকালে সব সময়ই আমি সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ খুঁজছিলাম এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তথা অপরাপর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়িয়ে পলায়নের প্রথম সুযোগই আমি গ্রহণ করি । ছাত্রদের সম্পর্কে জনাব মজুমদার বলেন, তথায় বহুসংখ্যক ছাত্রের সাথেই তার সাক্ষাৎ হয়েছে। এদের অনেকেই তার ছাত্র । তাদের হত্যা করা হবে এ ধরনের গুজবে আতংকগ্ৰস্ত হয়ে তারা ভারত গমন করে । ভারতে ছাত্রদের আশ্রয় স্থানও নেই। খাবার ব্যবস্থাও নেই। কোন রকম কাজ না করে শুধু ঘুরে বেড়ানোর কোন অধিকার তাদের নেই এধরনের তিরস্কার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অহরহই তাদের করছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাদের সামরিক ট্রেনিং গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করছে। তিনি বলেন যে, খাওয়া থাকার ব্যবস্থা না থাকায় তারা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ট্রেনিং গ্রহনের জন্য নাম লিখাচ্ছে । ট্রেনিং ক্যাম্পে তাদের মস্তিষ্ক ধোলাই করা হচ্ছে । অতঃপর তাদেরকে পূর্ব পাকিস্তানের ব্রীজ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানমূহ বিনষ্ট করার কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। তাদের কাজের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কড়া নজর রাখে । মন্ত্রী বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে, এদের মধ্যে অনেকেই তাদের অভিযানের কাহিনী শুনায়। এ-ভাবেই অবস্থার শিকারে এ-সব তরুণরা নিজেদের জান বাঁচাতে চেষ্টা করে। জনাব মজুমদার পাকিস্তানে ফিরে এসে পুনরায় পড়াশুনা শুরু করার জন্য তরুণ সমাজের প্রতি আবেদন জানায় । তিনি বলেন, এদের জন্য আমার প্রাণ কাঁদছে, কারণ শিক্ষক হিসাবে আমি বহুকাল তাদের মধ্যে অতিবাহিত করেছি। নিজের দেশের সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে তারা শুধু ভারতের গোপন দুরভসন্ধি পূরণের পক্ষেই কাজে করছে। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে একদিন তারা তাদের এ ধরনের কাজের জন্য অনুতপ্ত হবে।