পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

593 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ভারতীয় নৌবাহিনীর চট্টগ্রামে পৌছার চেষ্টা জেনারেল বলেন যে, রোববার ভারতীয় নৌবাহিনী চট্টগ্রাম উপনীত হওয়ার চেষ্টা চালায়। আমাদের নৌযান তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে । একজন প্রশ্নকারীর জবাবে তিনি বলেন যে, কুমিল্লা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল বলেন, ফেনীতেও পাকিস্তান সেনাদল যুদ্ধ চালাচ্ছে। চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় তিনি জানান যে ভারতীয়রা চট্টগ্রামের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু সেখানে সেনারা বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মেজর জেনারেল একজন বিদেশী সাংবাদিককে জানান যে বর্তমানে ঢাকায় বিপন্ন জাতিসংঘ কর্মচারীদের অপসারণের জন্য ৬ই ডিসেম্বর তারিখ ঢাকায় সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখার ব্যাপরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জাতিসংঘের অনুরোধে সম্মত হয়। কিন্তু ভারতীয় জঙ্গী বিমান ঢাকা বিমাননন্দরে আক্রমণ চালিয়ে তাদের ঢাকা ত্যাগের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি স্মিতহাস্যে বলেন, ঠিক জানি না কেন ভারতীয়রা এমন কাজ করলো। জাতিসংঘ কর্মচারীর ঢাকা ত্যাগ করুক তারা হয়তো তা চায় না। রানওয়েতে একটা গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে আজ ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়েতে একটা গর্ত সৃষ্টি করা ছাড়া হামলাকারী ভারতীয় বিমানসমূহ বিশেষ কোনই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এতক্ষণে রানওয়ে হয়তো মেরামতও করা হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন যে ১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধে ইসরাইল যেমনটি করেছিল তেমনভাবে ভূমিতে রাখা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমানসমূহ ধ্বংস করাই ভারতীয় বিমান বাহিনীর বার বার ঢাকা বিমাননন্দরের ওপর আঘাত হানার প্রধান লক্ষ্য। জাতিসংঘের দুটো এবং অপর একটা টুইন বিমান ছাড়া ভারতীয়রা ভূমিতে রাখা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আর একটা বিমানের ওপরও আঘাত হানতে পারেনি। বিমান বিধ্বংসী কামানসমূহ চবৎকার কাজ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বলেন যে ৪ঠা ডিসেম্বর তারিখে ঢাকায় হামলাকারী ভারতীয় জঙ্গী বিমানসমূহের যে দুৰ্গতি হয়েছে তাতে অবশ্যই আক্রমণকারীর একটা উপযুক্ত শিক্ষা হয়েছে। তিনি বলেন যে গতকাল (সোমবার) বিকাল নাগাদ পূর্ব পাকিস্তনের ১৬টি ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি হাল্কা বিমান বিধ্বংসী কামান দিয়ে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় ও অপর ১০টি পি, এ, এফ বিমান ভূপাতিত করে। ক্ষতিগ্রস্ত অপর ৫টি ভারতীয় বিমান অবশ্য ভারতে পাড়ি জমাতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ২টি বিমান চট্টগ্রাম এলাকায় পাকিস্তান নৌবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত করে। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বলেন যে ভারত কর্তৃক তিনটি মুখ্য সাফল্যকে ভারত পাকিস্তনের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে তিনি জানান। উত্তর ময়মনসিংহ উত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় কৌশলগত যুদ্ধ চলছে বলে মেজর জেনারেল জানান। তিনি বলেন যে কামালপুর ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে পাকিস্তান সেনাদল ভারতীয় পক্ষের ৬ থেকে ৭ গুণ অধিক লোককে হতাহত করে ঠাকুরগাঁ এলাকায় বরাবরই ভারতীয়দের মূল অভিযান চলছে বলে তিনি জানান।