পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

608 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ভারতের প্রতি ভুট্টোর সতর্কবাণী মুলতান, ৫ই এপ্রিল- পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো আজ ভারতের প্রতি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ভারতকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। দৈনিক জং-এর এক খবরে বলা হয়, জনাব ভুট্টো বলেন, পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ এবং ভারতের প্রতিটি আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের দাঁত ভাংগা জওয়াব দেয়ার জন্য তারা প্রস্তত। জনাব ভুট্টো তার ১৯৬৪ সালের জুলাই মাসের এক বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের মহান প্রতিবেশী চীন এ অঞ্চলে ভারতকে তার সম্প্রসারণমূলক যুদ্ধ শুরু করতে দেবে না। একথার প্রমাণ ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাওয় গেছে। এশিয়ার এই বিরাট শক্তি ১৯৬৫ সালে ভারতকে যে চরমপত্র দিয়েছিল ভারতের তা বিস্মৃত হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, এশিয়ার মহান মক্তি চীনের জনগণ নিজের উক্তিতে অনড়। খাঁটি বন্ধু ও স্বাধীনতা প্রিয় এবং স্বাধীনতা সংগামীদের প্রতি চীনাদের সমর্থন রয়েছে। জনাব ভুট্টো আজ মুলতানে পিপিপির কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভষণদান প্রসংগে বলেন, জাতি এখন মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন। পাকিস্তনের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের শক্ররা দেশের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বেও জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একা সরকারের পক্ষে এ সংকট আয়ত্তে আনা সম্ভব নয় প্রতিটি নাগরিকদের এ নাজুক মুহুর্তে নিজের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান পিপলস পার্টি দেশের নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব ও সংহতির জন্য সচেষ্ট। তিনি বলেন, তার পার্টি এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেনা যাতে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে পড়বে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা ও সংহতি সংরক্ষণ করা। এ জন্য আমরা যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। বর্তমান সংকটের উল্লেখ করে জনাব ভুট্টো বলেন, অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের ছ-দফা কর্মসূচী ছিল মূলতঃ দেশকে দু-অংশে বিভক্ত করার ফর্মুলা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে তাড়াতাড়ি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পক্ষপাতি ছিলেন। কারণ তাতে পরিষদে অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর ৬ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজন প্রত্যাখ্যাত বিনাশর্তে শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। কেননা তাঁদের আশা ছিল তারা মন্ত্রীত্ব পাবেন। জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, পিপিপি জানত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে পূর্বে প্রস্তুতকৃত আইন অনুমোদন ছাড়া আর কিছুই করা হবে না। অধুনালুপ্ত আওলামী লীগ ৬-দফা ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রুপ দিয়েছিল। অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ স্পষ্ট ঘোষণা করেছিল, সে ৬-দফা কর্মসুচীতে এতটুকু পরিবর্তন করবে না। এ জন্য পরিষদে কোন প্রকার অর্থপূর্ণ আলোচনাও সম্ভব ছিল না। আর এ জন্যই পিপলস পার্টি পীড়াপীড়ি করেছিল যে পরিষদের অধিবেশনর আগেই শাসনতন্ত্রের মৌলিক বিষয়ে উভয় সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টির ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন। জনাব ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান জানুয়ারী মাসে পরিষদের অধিবেশন ডাকতে চাইতেন কিন্তু মার্চে তিনি পরিষদের বাইরে সমাঝোতা স্থাপনে সম্মত হন। একথা স্পষ্ট যে, পিপলস পার্টি আইনগত ভাবে দেশকে টুকরো করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল। জনাব ভুট্টো বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের কোন কোন নেতা অভিযোগ করেছিলেন, যে, তিনি করাচী এক জনসভায় দেশকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা পেশ করেন। অথচ তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর হাতে হস্তান্তর করতে হবে।