পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

630 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড কাছে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। দেশের পূর্বাঞ্চলে এক বিশেষ অবস্থা বিদ্যমান থাকায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এখনো হয়নি বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। কারণস্বরূপ তিনি বলেন, এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে সেখানে পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা সৃষ্টি সম্ভব নয়। পিডিপি নেতা বলেন, একনায়কত্ববাদ কিংবা সেনাবাহিনীই এখন দেশের উত্তর অংশকে একত্রে রাখতে পারে বলে যারা বলাবলি করছেন, তাদের সাথে তিনি একমত নন। এই ধরনের মনোভাবের যত তাড়াতাড়ি অবসান ঘটবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব নূরুল আমীন আবার ঘোষণা করেন যে, একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই পাকিস্তানের উভয় অংশকে অটুট ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বের পরিপ্রেক্ষিতে আজ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে যোগসূত্র আবার প্রতিষ্ঠিত করবে। ১৯৫৮ সালে এই যোগসূত্র ছিন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এই যোগসূত্রের অভাবেই দেশের উভয় অংশের জনগণের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। জনাব নূরুল আমীন দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, বিপদের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং ২৫শে মার্চে পর তা কাটিয়ে উঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ তখন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টির প্রয়াস পায়। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আজ বুঝতে পেরেছেন যে তারা ৬ দফার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার ব্যাপারে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। -দৈনিক পাকিস্তান, ২২ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ মন্ত্রী সম্বর্ধনায় গোলাম আজম (ষ্টাফ রিপোর্টার) পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম বলেছেন, জামাতে ইসলামীর কর্মীরা বলেন, জামাতের কর্মীরা শাহাদাৎ বরণ করে পাকিস্তানের দুষমনদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা মরতে রাজী তবুও পাকিস্তানকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতে রাজী নয়। গতকাল শনিবার স্থানীয় হোটেল এম্পায়ারে ঢাকা শহর জামাত কর্তৃক প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী জনাব আববাস আলী খান ও রাজস্বমন্ত্রী মওলানা একেএম ইউসুফকে প্রদত্ত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক গোলাম আজম ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সারা প্রদেশ সামরিক বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও যে কয়েক হাজার লোক শহীদ হয়েছেন তাদের অধিকাংশই জামাতের কর্মী। আইন সভার মাধ্যমে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়নি সেই মন্ত্রিসভায় জামাতের যোগদান সম্পর্কে তিনি দলের নীতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রদেশের জনসংখ্যার শতকরা যে ২০ভাগ লোক সক্রিয় রয়েছে তারা দুভাগে বিভক্ত। এক দল পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায় আর একদল পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত। জামাতে ইসলামী শেষোক্ত দলভুক্ত। তিনি বলেন, জামাতের যে দুজন সদস্য মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে । অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে জামাত রাজাকার বাহিনীতে লোক শান্তি কমিটিতে লোক যোগ দিয়েছে সেই উদ্দেশ্যেই মন্ত্রিসভায় লোক পাঠিয়েছে। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে কাজ করছি সেই কাজে সাহায্য করার জন্যই দুজনকে মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মন্ত্রী পদ ভোগের বা সম্মানের বস্তু নয়। আমরা তাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছি।........