পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

637 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড আমাদের উপর যুদ্ধ যদি চাপিয়ে দাও তাহলে তাহবে চূড়ান্ত, যুদ্ধ, সর্বাত্মক যুদ্ধ। তিনি দক্ষিণপন্থী ছয় দলের মৈত্রীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন নিজে ছয় দলের আমীর না হয়ে মওলানা মওদুদীকে তার আমীর করিয়েছেন। তিনি বলেন, পিপলস পার্টি শ্রমিক কৃষক, ছাত্র বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে মৈত্রী করবে। -দৈনিক পাকিস্তান, ১৩ নভেম্বর, ১৯৭১ প্রধানমন্ত্রীর পদ পূর্ব পাকিস্তানীকে দিতে হবে গোলাম আজমের দাবী (ষ্টাফ রিপোর্টার) গতকাল সোমবার পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ এক জন পূর্ব পাকিস্তানীকে প্রদানের দাবী জানিয়েছেন। ছয় দলের নির্বাচনী জোটের নেতা জনাব নুরুল আমীনের ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত লাহোরে প্রদত্ত বক্তৃতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন যে, দেশের এই অংশের জনগণের মন থেকে অতীতে বঞ্চনার মনোভাব ক্রমশঃ দূর করতে হলে প্রধান রাজনৈতিক পদটি অবশ্যই একজন পূর্ব পাকিস্তানীকে দিতে হবে। ন্যায় বিচার এটাই দাবী করে। তিনি বলেন আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইয়েরা একথা ভালোভাবেই দীর্ঘ দশ বছরের একনায়কতু শাসনামলে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর ফলেই জাতি বর্তমানের গুরুতর সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ভুয়া থিওরি জনাব ভুট্টোর সমালোচনা করে জামাতে নেতা বলেন এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে ক্ষমতার জন্য জনাব ভুট্টোকে এক অদ্ভুত ধরনের পাগলামী পেয়ে বসেছে। এই পাগলামীর জন্যই তিনি একই রাষ্ট্রে দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের থিওরি সৃষ্টি করেছিলেন। ক্ষমতার লোভে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এমন ভাবে বেসামাল হয়ে পড়েছেন যে তাঁরা অন্যান্য দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। গত ক’মাস থেকে জনাব ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ মনে মনে পোষণ করে আসছেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ‘ছ দলের মৈত্রী এবং পাকিস্তান ভিত্তিতে বামপন্থী নয় এমন দলগুলোর ঐক্যের সম্ভাবনা তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশাকে মনে হয় ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ধারণা হচ্ছে যে শেখ মুজিবর রহমানের সাথে জনাব ভুট্টো ক্ষমতার অংশীদারিতু থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে ভীত ছিলেন। এই হতাশার মনোভাবই জনাব ভুট্টোকে তাঁর পথ থেকে শেখ মুজিবর রহমানের অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পরিচালিত করেছিল। প্রাদেশিক জামাতের আমীর বলেন, আমার মনে হয় জনাব ভুট্টো নিজেও নিজেকে অপরাধী বলে মনে করেন। এ কারণেই গত সাত মাস ধরে এখানকার জনগণ যে মহাসঙ্কটের মোকাবিলা করছেন সে সময় জনাব ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসতে পারেননি। আমি বুঝতে পারি না এই মনোভাব নিয়ে তিনি কি করে জাতীয় নেতা হওয়ার দুঃসাহস করেন। তবে অদূর ভবিষ্যতে তিনি জাতীয় নেতা হওয়ার গুণাবলী অর্জন করুন আমি বরং এই মোনাজাতই করি। দেশের সংহতির স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনোভাবকে উপেক্ষা না করার জন্য বিবৃতিতে তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতি আহবান জানান। -দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১