পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

654 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড পূর্ব পাকিস্তান কৃষি-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর ড. কামাল উদ্দীন এবারকার আজাদী দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে সিম্পোজিয়ামে বক্তৃতা করেন। বলেন, বৃহৎ শক্তিগুলো পাকিস্তানকে তাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে পরিণত করার চেষ্ট করছে। তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের স্বার্থের বিরুদ্ধে জোট বাঁধছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান দেশ হিসেবে ক্ষুদ্র হতে পারে এর আয়তন অন্য রাষ্ট্রের তুলনায় কম হতে পারে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যর উপর ভৌগোলিক প্রভাব বিস্তার করায় পাকিস্তানের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে অন্য কোনো দেশের তা নেই। তাই আমাদের রাষ্ট্রনায়কদের বলেন গত সাধারণ নির্বাচনের সময় আমি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলাম যে পাকিস্তান দ্বিতীয় ভিয়েতনামে পরিণত হতে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তাতে আমল দেননি। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে দুর্বল করার এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য বৃহৎ শক্তিগুলো প্যাক্ট করছে। তাই তাদের নজর আজ পাকিস্তান বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের উপর। কারণ পূর্ব পাকিস্তান লোভনীয় জায়গা। সামরিক দিক দিয়ে এর গুরুত্ব বেশী। তিনি বলেন, তাই আজ আমাদের নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কারণ দেশ আমাদের, দেশের ১২ কোটি জনতার। কেউ যদি বিপথে চালিত হয় তাকে বুঝাতে হবে। দেশের বর্তমান সংকটকে ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধকালীন সময়ের চেয়েও গুরুতর অভিহিত করে জনাব নূরুল আমীন বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান সংকট ১৯৬৫ সালের চেয়েও গুরুতর। কারণ তখন বড় শক্তিগুলো প্রকাশ্যে যুদ্ধে জড়িত হয়নি। বরং তারা যুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এবার বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের কারো কারো স্বার্থেই যুদ্ধ বাধাতে পারে। তবে আমরা বন্ধুহীন নই। কেউ আমাদের কাবু করতে পারবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জনাব নূরুল আমীন বলেন, বর্তমান সরকার বাধ্য হয়েই সামরিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। তবে সময় আসলেই জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন খুব দূরে নয় বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় পূর্ব পাকিস্তানের দাবি দাওয়া মিটিয়ে দিতে হবে। পূর্ব পাকিস্তানের দাবী দাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জনাব নূরুল আমীন বলেন, আমরা পূর্ব পাকিস্তানের দাবী দাওয়া আদায়ে কোন সময়ই কার্পণ্য করিনি। বরাবরই পূর্ব পাকিস্তানের স্বাৰ্থ আদায়ের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। কোন দল বা ব্যক্তিবিশেষই পূর্ব পাকিস্তানের দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছেন একথা বললে ভুল করা হবে। আজাদী দিবসের কথা উল্লেখ করে জনাব নুরুল আমীন বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। কিন্তু এই আনন্দের দিনেও আমাদের মন ভারাক্রান্ত। কারণ জাতির জীবনে আজ বৃহত্তম সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। যাঁরা অশেষ কোরবানী দিয়ে পাকিস্তান এনেছেন এবং যারা পাকিস্তানের আদর্শ বাস্তবায়িত হওয়া ও এর স্থায়িত্ব কামনা করেন তাঁদের মনবেদনা আমি বুঝি। তাই আজ আমরা আত্মসমালোচনা করবো। আত্মশুদ্ধি করবো এবং আত্মপ্রত্যয়ের চেষ্টা করবো। নিজেদের উপর বিশ্বাস রেখে আমরা সংকট মুক্তির পথ নেবো। তিনি বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য আমরা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি এবং সে সংগ্রামে আমরা জয়ী হয়েছি। কারণ আত্মপ্রত্যয় ও লক্ষ্যে পৌছবার দৃঢ়তা আমাদের ছিল। তাই সাত বছরের মধ্যে পাক ভারতের ভৌগোলিক সীমা রেখার পরিবর্তন করে বিনা যুদ্ধে আমরা একটা রাষ্ট্র কায়েম করেছি। ইতিহাসে এটা নজীরবিহীন। জনাব নুরুল আমীন বলেন, আজো পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আমাদের বিরুদ্ধ শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। আত্মপ্রত্যয় ও বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে আমরা এগিয়ে যাব। চিন্তা, কার্য ও