668 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড (৩) পাকিস্তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে বিরূপ প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই অপপ্রচার করছে তাদের সম্পর্কে হুশিয়ার থাকুন এবং (৪) বায়তুল মোকান্দাসকে উদ্ধারের সংগ্রাম চলবে। জনাব মুজাহিদ এই ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করার জমায়েতে ঢাকা শহর ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ শামসুল হক সভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতা দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক জনাব মীর কাশেম আলী। তিনি বলেন যে,আজকের বদর দিবসের শপথ হলোঃ (ক) ভারতের আক্রমণ রুখে দাঁড়াবো। (খ) দুস্কৃতিকারীদের খতম করবো। (গ) ইসলামী সমাজ কায়েম করবো। জনাব মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন যে, আজকের এই ১৭ই রমজানের পবিত্র দিনে বদরের বীরত্বপূর্ণ ঘটনার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাতিল শক্তিকে নির্মুল করার শপথ নতুন করে নিচ্ছি। গণজমায়েতের প্রত্যেক বক্তা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষার জন্যে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের সীমান্তে ভারতীয় হামলা চলছে বলে উল্লেখ করে জনগণকে এর বিরুদ্ধে একাত্ম হয়ে সংগ্রাম করার জন্যে তারা আহবান জানান। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ থেকে প্রেরণা ও শিক্ষা লাভের জন্যেও তারা আহবান জানান। সভার পর এর মিছিল বেরোয়। নওয়াবপুর রোড হয়ে বাহাদুরশাহ পার্কে গিয়ে তা শেষ হয়। মিছিলের কয়েকটি শ্লোগান ছিলঃ ১। আমাদের রক্তে পাকিস্তান টিকবে। ২। বীর মুজাহিদ অস্ত্র ধর, ভারতকে খতম কর। ৩। মুজাহিদ এগিয়ে চল, কলিকাতা দখল কর। ৪। বদর দিবস সফল হোক। ৫। ভারতের চরদের খতম কর ইত্যাদি। -দৈনিক পাকিস্তান, ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ সিলেট ও পাবনায় রাজাকার তৎপরতা গতকাল সোমবার রাজাকাররা সিলেট ও পাবনায় ভারতীয় চর বহনকারী ৯টি নৌবা ডুবিয়ে দিয়েছে। ঢাকায় প্রাপ্ত এপিপি পরিবেশিত খবরে জানা গেছে, নৌকা যোগে প্রায় দুই শত ভারতীয় চর সিলেটের জাকিগঞ্জের নিকট পাকিস্তানী এলাকায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে এই খবর জানতে পেরে ৫০ জন রাজাকার উক্ত এলাকায় গমন করে এবং শত্রর অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে। নৌকাগুলো সীমান্তের এপাশে আসার সাথে সাথে রাজাকাররা তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় চররা পাল্টা গুলি ছোড়ে এবং রাজাকারদের মারধর করার উদ্দেশ্যে নৌকা থেকে নামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাদেরকে একাজ করার সুযোগ দেয়া হয়নি। তাদের অধিকাংশ নৌকাতেই আঘাত পায় এবং অন্যান্যরা নৌকা সমেত পানিতে ডুবে যায়। ৩টি নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যান্য নৌকা ভারতীয় এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পানিতে ডুবে গেছে। অপর এক খবরে জানা যায় যে গতকাল সোমবার রাজাকাররা রংপুর ও কুমিল্লা জেলায় একটি রেল সেতু ও একটি সড়কসেতু রক্ষা করেছে। রেল সেতুটি রংপুর জেলার গাইবান্ধার ২ মাইল দক্ষিণ ত্রিমোহনিতে অবস্থিত। আর সড়ক সেতুটি কুমিল্লা জেলার লাকসামের ৮ মাইল পশ্চিমে মুর্গাপুরের নিকট অবস্থিত। -দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১