পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

একটাতে হাত হচ্ছে উপায়, আর-একটাতে হাত হচ্ছে আধার। পাল্কিতে ক’রে মানুষ যায়, কিন্তু যায় পথ 'দিয়ে'। এখানে পাল্কি উপায়, পথ আধার। কিন্তু অর্থ হিসাবে বিকল্পে হাত উপায়ও হতে পারে, আধারও হতে পারে। তাই ‘হাত দিয়ে খাও’ বলাও চলে, “হাতে ক’রে খাও' বলতেও দোষ নেই।

 ব'লে থাকি: বড়ো রাস্তা দিয়ে যখন যাবে গাড়িতে ক’রে যেয়ো। কোনো সাহেব যদি বলে ‘রাস্তায় ক’রে যাবার সময় গাড়ি দিয়ে যেয়ো’, বুঝব সে বাঙালি নয়। লোক 'দিয়ে' পাঠাব চিঠি, লোকটা উপায়; ব্যাগে ‘ক’রে' সে চিঠি নেবে, ব্যাগটা আধার।


১৭

 ‘হতে' আর 'থেকে' এই দুটো শব্দ বাংলা অপাদানের সম্বল। প্রাচীন হিন্দিতে 'হতে' শব্দের জুড়ি পাওয়া যায় 'হুন্তো’, নেপালিতে ‘ভন্দা’, সংস্কৃত 'ভবন্ত’। প্রাচীন রামায়ণে দেখেছি: ঘরে হনে, ভূমি হনে।

 অপভ্রংশ প্রাকৃতের অপাদানে পাওয়া যায়: হোংতও হোংতউ। 'থেকে’ শব্দটার ধ্বনিসাদৃশ্য পাওয়া যায় নেপালিতে, যেমন: ‘তাঁহা দেখি=সেখান থেকে, মাঝ দেখি=মাঝ থেকে। গুজরাটিতে আছে ‘থকি’। বাংলায় অপাদানে একটা গ্রাম্য প্রয়োগ আছে ‘ঠেঞে' (ঠাঁই হতে), যথা: তোমার ঠেঞে কিছল আদায় করতে হবে।

 একদা পালি ব্যাকরণে পেয়েছিলাম ‘অজ্জতগ্‌গে’ শব্দ। এর সংস্কৃত মূল 'অদ্যতঃ অগ্রে’, ‘আজ থেকে' শব্দের সঙ্গে এর ধ্বনি ও অর্থের মিল আছে। জানি নে পণ্ডিতদের কাছে এ ইঙ্গিত গ্রাহ্য হবে কি না।

 এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে। ‘পশুর থেকে মানুষের উৎপত্তি’ এ কথা বলা চলে। কিন্তু ‘মানুষ থেকে গন্ধ বেরচ্ছে' বলি নে, বলি ‘মানুষের গা থেকে' কিংবা 'কাপড় থেকে'। ‘বিপিন থেকে

১০৩