উকারের ব্যবহার দেখলে মনে পড়ে কোকিলকে, সে যেখানে সেখানে পরের বাসায় ডিম পেড়ে যায়।
এও দেখা গেছে ইআ প্রত্যয়-ওয়ালা শব্দে ই’কে ঠেলে উ অনধিকারে নিজে আসন জুড়ে বসে, যেমন: জঙ্গল=জঙ্গলিয়া=জঙ্গুলে, বাদল=বাদলিয়া=বাদুলে। এমনিতরো: নাটুকে মাতুনে।
হাতুড়ে কাঠুরে সাপুড়ে হাটুরে ঘেসুড়ে: এদের মধ্যে কোনো একটা প্রত্যয় যোগে র বা ড় এসে জুটেছে। লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, ‘ঘেসুড়ে'র ঘাসে লাগল একার, সাপুড়ে’র সাপ রইল নিরবিকার। ভাষাকে প্রশ্ন করলে এক-এক সময়ে ভালো জবাব পাই, এক-এক সময় পাইও নে। চাষ যে করে সে 'চাষুড়ে' হল না কেন।
আমার হিন্দিভাষী বন্ধু বলেন, বাংলায় ‘সাপুড়ে’; হিন্দিতে: সঁপেরা=সাঁপ+হারা। বাংলা ‘কাঠুরে’ হিন্দিতে ‘লকড়হারা’, হিন্দিতে ‘কাঠহারা’ কথা নেই। হিন্দির এই 'হারা' তদ্ধিত প্রত্যয়; অধিকার অর্থে এর প্রয়োগ, ক্রিয়া অর্থে নয়। বোধ করি সেই কারণে ‘চাষুড়ে’ শব্দটা সম্ভব হয় নি।
স্বরবিকারের আর-একটা অদ্ভুত দ্রণ্টান্ত দেখো। ইআ প্রত্যয়যোগে একটা ওকার খামখা হয়ে গেল উ: গোবোর+ইয়া=গুবরে, কোঁদোল+ইয়া=কুঁদুলে। ‘কুঁদ্লে’ হল না কেন সেও একটা প্রশ্ন। ‘গোবোর’ থেকে ওকারটাকে হসন্তের ঘায়ে তাড়িয়ে দিলে, ‘কোঁদোল’ শব্দে ও হসন্তকে জায়গা না দিয়ে নিজে বসল জমিয়ে।
অকারের প্রতি উপেক্ষা সম্বন্ধে আরও প্রমাণ দেওয়া যায়। হাত বুলিয়ে সন্ধান করাকে বলে ‘হাৎড়ানো’, অসমাপিকায় ‘হাৎড়িয়ে’। এখানে ‘হাত’এর ত থেকে ছেটে দেওয়া হল অকার। অথচ 'হাতুড়ে' শব্দের বেলায় অকারকে কিছুতে আমল দিল না। 'বাদল’ শব্দের উত্তর ইআ প্রত্যয় যোগ ক’রে ‘বাদলে’ করলে না বটে, কিন্তু দিলে ‘বাদুলে’ করে।