এই সব দৃষ্টান্ত থেকে বুঝতে পারি, অন্তত পশ্চিম ও দক্ষিণ বঙ্গের রসনার টান আছে উকারের দিকে। 'হাতড়ি' শব্দ তাই সহজেই হয়েছে ‘হাতুড়ি’। তা ছাড়া দেখো: বাছুর তেতু্ল বামুন মিশুক হিংসুক বিষ্যুৎবার।[১]
এই প্রসঙ্গে আর-একটা দৃষ্টান্ত দেবার আছে। ‘চিবোতে’ 'ঘুমোতে' শব্দের স্থলে আজকাল 'চিবুতে', 'ঘুমুতে' উচ্চারণ ও বানান চলেছে। আজকাল বলছি এইজন্যে যে, আমার নিজের কাছে এই উচ্চারণ ছিল অপরিচিত ও অব্যবহৃত। ‘চিবোতে’ ‘ঘুমোতে’ শব্দের মূলরূপ: চিবাইতে ঘুমাইতে। আ+ই’কে ঠেলে ফেলে নিঃসম্পর্কীয় উ এসে বসল। অবশ্য এর অন্য নজির আছে। বিনানি=বিনুনি, ঝিমানি=ঝিমুনি, পিটানি=পিটুনি শব্দে দেখা যাচ্ছে প্রথম বর্ণের ইকার তার সবর্ণ তৃতীয় বর্ণের 'পরে হস্তক্ষেপ করলে না, অথচ মধ্যবর্ণের আ’কে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসিয়ে দিলে উ। মনে রাখতে হবে, প্রথম বর্ণের ইকার তার এই বন্ধু উ'কে নিমন্ত্রণের জন্যে দায়ী। গোড়ায় যেখানে ই'কারের ইঙ্গিত নেই সেখানে উ পথ পায় না ঢুকতে। পবেই তার দৃষ্টান্ত দিয়েছি। “ঠ্যাঙানি হয় না ঠেঙুনি’, ‘ঠকানি হয় না ঠকুনি’, ‘বাঁকানি হয় না ‘বাঁকুনি’। ‘চিবুতে' ‘ঘুমুতে' উচ্চারণ আমার কানে ঠিক ব’লে ঠেকে না, সে যে নিতান্ত কেবল অভ্যাসের জন্যে তা আমি মানতে পারি নে। বাংলা ভাষায় এ উচ্চারণ অনিবার্য নয়। আমার বিশ্বাস ‘চিনাইতে’ শব্দকে কেউ 'চিনুতে' বলে না, অন্তত আমার তাই ধারণা। 'দুলাইতে' কেউ কি 'দুলুতে', কিংবা ‘ছুটাইতে' ‘ছুটুতে’ বলে? “বুঝাইতে' বলতে ‘বুঝুতে’ কেউ বলে কি না নিশ্চিত জানি
- ↑ হিন্দিতে 'হাতুড়ি' শব্দের প্রতিশব্দ স্ত্রীলিঙ্গে 'হতৌড়ি'। বিহারীতে স্ত্রীলিঙ্গে ‘হতউরি’। ঔড়া এবং উরা প্রতায় থেকে উকারের প্রবেশ স্বাভাবিক। হিন্দিতেও হ্রস্ব ওকারকে উকারের মতো বলবার ও লেখবার প্রবৃত্তি আছে: বোলবানা=বূলবানা, ফোড়বানা=ফুড়বানা, গোবর+ঐলা=গূবরৈলা।