বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

পিত্তেয়, কখনো হয় ‘পেত্তয়’। একারকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে ইকার এবং ঋকার, তারও দৃষ্টান্ত আছে, যেমন: সেদ্ধো (সিদ্ধ), নেত্তো (নিত্য বা নৃত্য), কেষ্টো (কিষ্টো), শেকোল (শিকল), বেরোদ (বৃহৎ), খেস্টান (খৃস্টান)। প্রথম বণকে ডিঙিয়ে মাঝখানের বণে একার লাফ দিয়েছে সেও লক্ষ্য করবার বিষয়, যেমন: নিশ্বেস বিশ্বেস, সরেস (সরস), নীরেস ঈশেন বিলেত বিকেল আদেটি।

 স্বরবণের খেয়ালের আর-একটা দৃষ্টান্ত দেখানো যাক। —

 ‘পিটানো’ শব্দের প্রথম বর্ণের ইকার যদি অবিকৃত থাকে তা হলে দ্বিতীয় বণের আকারকে দেয় ওকার করে, হয় ‘পিটোনো’। ইকার যদি বিগড়ে গিয়ে একার হয় তা হলে আকার থাকে নিরাপদে, হয় ‘পেটানো’। তেমনি: মিটোনো=মেটানো, বিলোনো=বেলানো, কিলোনো=কেলানো। ইকারে একারে যেমন অদল-বদলের সম্বন্ধ তেমনি উকারে ওকারে। শব্দের প্রথম বর্ণে উ যদি খাঁটি থাকে তা হলে দ্বিতীয় বর্ণের অকারকে পরাস্ত ক’রে করবে ওকার। যেমন ‘ভুলানো হয়ে থাকে ভুলোনো’। কিন্তু যদি ঐ উকারের সখলন হয়ে হয় ওকার তা হলে আকারের ক্ষতি হয় না, তখন হয় 'ভোলানো’। তেমনি: ডুবোনো=ডোবানো, ছদটোনো=ছোটানো। কিন্তু ‘ঘমোনো কখনোই হয় না ঘোমানো’, ‘কুলোনো’ হয় না ‘কোলানো‘ কেন। অকর্মক বলে কি ওর স্বতন্ত্র বিধান।

 দেখা যাচ্ছে বাংলা উচ্চারণে ইকার এবং উকার খুব কর্মিষ্ঠ, একার এবং ওকার ওদের শরণাগত, বাংলা অকার এবং আকার উৎপাত সইতেই আছে।

 স্বরবর্ণের কোঠায় আমরা ঋ’কে ঋণস্বরূপে নিয়েছি বর্ণমালায়, কিন্তু উচ্চারণ করি ব্যঞ্জন বর্ণের রি। সেইজন্যে অনেক বাঙালি ‘মাতৃভূমি'কে বলেন 'মাত্রিভূমি'। যে কবি তাঁর ছন্দে ঋকারকে স্বরবর্ণরপে ব্যবহার করেন তাঁর ছন্দে ঐ বর্ণে অনেকের রসনা ঠোকর খায়।

৬৯