পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

লাগিয়ে দেওয়া যায়। সংস্কৃতে ‘শক্তিমান’ বলব, ‘ধনবান’ বলব; বাংলায় একটাকে বলব ‘জোরালো’ আর-একটাকে ‘টাকাওয়ালা’। অন্য ভাষাতেও ভাষার খেয়াল ক্ষণে ক্ষণে দেখা দেয়, কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি কম। যেমন ইংরেজিতে আছে: হেল্‌থি ওয়েল্‌থি প্লাকি লাকি ওয়েটি স্টিকি মিস্টি ফগি। কিন্তু ‘কারেজি’ নয়, ‘কারেজিয়স’। তবু একটা নিয়ম পাওয়া যায়। এক সিলেব্‌ল্‌’এর হালকা কথায় প্রায় সর্বত্রই বিশিষ্ট অথে y লাগে, বড়ো মাত্রার কথায় এই প্রত্যয় খাটে না।

 পূবেই বলেছি বাংলা ভাষাতেও প্রত্যয় আছে, কিন্তু তাদের প্রয়োগ সংকীর্ণ, আর তাদের নিয়ম ও ব্যতিক্রমে পাল্লা চলেছে, কে হারে কে জেতে।

 সংস্কৃতে আছে ত প্রত্যয়-যুক্ত ‘বিকশিত পুষ্প’, বাংলায় ‘ফোটা ফুল’। বুক-ফাটা কান্না, চুল-চেরা তর্ক, মন-মাতানো গান, নুয়ে-পড়া ডাল, কুলি-খাটানো ব্যাবসা: এই দৃষ্টান্তগুলোতে পাওয়া যায় আ প্রত্যয়, আনো প্রত্যয়। কাজ চলে, কিন্তু এর চেয়ে আর-একটু জটিল হলে মুশকিল বাধে। ‘অচিন্তিতপূর্ব ঘটনা’ খাস বাংলায় সহজে বলবার জো নেই।

 কিন্তু এ কথাও জেনে রাখা ভালো, খাস বাংলায় এমন-সব বলবার ভঙ্গী আছে যা আর কোথাও পাওয়া যায় না। শব্দকে দ্বিগুণ করবার একটা কৌশল কথ্য বাংলায় চলতি, কোনো অর্থবান শব্দে তার ইশারা দেওয়া যায় না। মাঠ ধূধূ করছে, রৌদ্র করছে ঝাঁঝাঁ: মানেওয়ালা কথায় এর ব্যাখ্যা অসম্ভব। তার কারণ, অর্থের চেয়ে ধ্বনি সহজে মনে প্রবেশ করে: উস্‌খূস্‌ নিস্‌পিস্‌ ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ কাচুমাচু শব্দের ধরাবাঁধা অর্থ নেই। তাদের কাছ থেকে যেন উপরি-পাওনা আদায় হয়, তাতে ব্যাকরণী টাঁকশালের ছাপ নেই।

 বাংলায় আর-একরকম শব্দদ্বৈত আছে তাদের মধ্যে অর্থের আভাস পাই, কিন্তু তারা যতটা বলে তার চেয়ে আঙুল দেখিয়ে দেয়

৭৯