পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

ব্যক্তিবাচক, স্থানবাচক, কালবাচক, পরিমাণবাচক, তুলনাবাচক, প্রশ্নবাচক।

 ‘মুই’ এক কালে উত্তমপুরুষ সর্বনামের সাধারণ ব্যবহারে প্রচলিত ছিল, প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে তা দেখতে পাই। ‘আমহি’ ক্রমশ ‘আমি’ রূপ ধরে ওকে করলে কোণঠেসা, ও রইল গ্রাম্য ভাষার আড়ালে। সেকালের সাহিত্যে ওকে দেখা গেছে দীনতাপ্রকাশের কাজে, যেমন: মুঞি অতি অভাগিনী।

 নিজের প্রতি অবজ্ঞা স্বাভাবিক নয় তাই ওকে সংকোচে সরে দাঁড়াতে হল। কিন্তু মধ্যমপুরুষের বেলায় যথাস্থানে কুণ্ঠার কোনো কারণ নেই, তাই ‘তুই’ শব্দে বাধা ঘটে নি, নীচের বেঞ্চিতে ও রয়ে গেল। ‘তুহি’ ‘তুমি’-রূপে ভর্তি হয়েছে উপরের কোঠায়। এরও গৌরবার্থ অনেকখানি ক্ষয়ে গেল, বোধকরি নির্বিচার সৌজন্যের আতিশয্যে। তাই উপরওয়ালাদের জন্যে আরও একটা শব্দের আমদানি করতে হয়েছে, ‘আপহি’ থেকে ‘আপনি’। আইনমতে মধ্যমপুরুষের আসন ওর নয়, ওর অনুবর্তী ক্রিয়াপদের রূপ দেখলেই তার প্রমাণ হয়। ‘তুমি’র বেলায় ‘আছ’; ‘আপনি’র বেলায় ‘আছেন’, এই শব্দটি যদি খাঁটি মধ্যমপুরুষ-জাতীয় হত তা হলে ওর অনুচর ক্রিয়াপদ হতে পারত ‘আপনি আছ’ কিংবা ‘আছ’।

 ‘আপনি’ শব্দের মলে হচ্ছে সংস্কৃত ‘আত্মন্‌’। বাংলায় প্রথমপুরুষেও ‘স্বয়ং’ অর্থে এর ব্যবহার আছে, যেমন: সে আপনিই আপনার প্রভু। আত্মীয়কে বলা হয় ‘আপন লোক’। হিন্দিতে সম্মানসূচক অর্থে প্রথমপুরুষ মধ্যমপুরুষ উভয়তই ‘আপ’ ব্যবহৃত হয়।

 বাংলা ভাষায় উত্তমপুরুষে ‘আম’-প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদের ব্যবহার চলে, সে সম্বন্ধে কিছু বক্তব্য আছে। তার তিনরকম রূপ প্রচলিত: করলাম, করলুম, করলেম। ‘করলাম’ নদিয়া হতে শুরু করে বাংলার পূর্বে ও উত্তরে চলে থাকে। এর প্রাচীন রূপ দেখেছি: আইলাঙ কইলাঙ। আমরা দক্ষিণী বাঙালি, আমাদের অভ্যস্ত ‘করলুম’ ও

৮৭