সদ্যঅতীত কালের প্রথমপুরুষ ক্রিয়াপদে বিকল্পে ইল এবং ইলে প্রয়োগ হয়, যেমন: সে ফল পাড়ল, সে ফল পাড়লে। এই একার প্রয়োগ প্রাচীন পদাবলীতে দৈবাৎ দেখেছি, যথা: বিঁধিলে বাণ। কিন্তু অনেক দেখা গেছে ময়নামতীর গানে, যেমন: বিকল দেখি হাড়িপা রহিলে। এ সম্বন্ধে একটা সাধারণ নিয়ম এই যে, অচেতনবাচক শব্দের ক্রিয়াপদে ‘এ’ লাগে না। অসমাপিকাতে লাগে, যেমন: পা ফুললে ডাক্তার ডেকো। ‘তার পা ফুলল’ হয়, ‘পা ফুললে’ হয় না। নির্বস্তুক শব্দ সম্বন্ধেও সেই কথা: তাঁর কলকাতায় যাওয়া ঘটল না। ‘ঘটলে না’ হতে পারে না। এ ছাড়া নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্রিয়াপদে ‘এ’ খাটে না: এল গেল হল, প’ল (পড়ল), ম’ল (মরল)। দুই অক্ষরের ক্রিয়াপদমাত্রে এই ব্যতিক্রম হয় এমন যেন মনে করা না হয়। তার প্রমাণ: খেল নিল দিল শুল ধুল। ইতে-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে ‘এ’ লাগে না, যেমন: করতে থাকল, হাসতে লাগল। কিন্তু ইয়া-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে লাগে, যেমন: সে হেসে ফেললে। এ ছাড়া আরও দুই-এক জায়গায় কানে সন্দেহ ঠেকে, যেমন ‘ভোর বেলায় সে মরলে’ বলি নে, ‘মরল’ ই ঠিক শোনায়। কিন্তু ‘তিনি মরলেন’ নিত্যব্যবহৃত। ‘কলকাতায় সে চললে’ বলি নে, কিন্তু ‘তিনি চললেন’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
প্রাচীন রামায়ণে দেখা গেছে প্রথমপুরুষের সদ্যঅতীত ক্রিয়াপদে প্রায় সর্বত্রই ক-প্রত্যয়-সমেত একার, যেমন: দিলেক লইলেক। আবার একারের সম্পর্ক নেই এমন দৃষ্টান্তও অনেক আছে, যেমন: চলিল সত্বর, পাঠাইল ত্বরিত। আধুনিক বাংলায় এইরূপ ক্রিয়াপদে কোথাও ‘এ’ লাগে কোথাও লাগে না, কিন্তু অন্তস্থিত ক-প্রত্যয়টা খসে গেছে।
প্রথমপুরুষ ইল-প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদে এই-যে একার প্রয়োগ, এরই সঙ্গে সম্ভবত ‘করলেম’ ‘চললেম’ শব্দের একার-উচ্চারণের যোগ আছে। করলেন (করিল তিনি), আর, করলেম (করিল আমি): এক নিয়মে পাশাপাশি বসতে পারে। আরও একটা কারণ উল্লেখ করা যেতে