পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R. বাংলায় ভ্রমণ বলি দেওয়া হইত বলিয়। কথিত। দিনাজপুর স্টেশনের সম্মুখে বিস্তৃত ময়দানটি অতি সুন্দর। দিনাজপুর হইতে মুর্শিদাবাদ রাস্ত ধরিয়া চমৎকার আম্ৰবীথির মধ্য দিয়া সাড়ে তিন মাইল পথ যাইলে রামসাগর নামে একটি সুন্দর দীঘি দৃষ্ট হয়। - - কান্তনগর—দিনাজপুর হইতে ঠাকুরগাঁও পর্য্যন্ত যে রাস্তা গিয়াছে, তাহার পার্থে দিনাজপুর শহর হইতে ১২ মাইল উত্তরে অবস্থিত কান্তনগর একটি পুরাতন স্থান। এখানে একটি প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আছে। প্রবাদ, ইহা মহাভারতোক্ত মৎস্যরাজ বিরাটের দর্ণ। এই দুর্গটি প্রায় এক মাইল স্বান জুড়িয়া অবস্থিত। ইহার ভিতরে দুই তিনটি ঢিবি আছে; ইহার উচচ প্রাকারগুলি জঙ্গলের দ্বারা সমাচ্ছন্ন। এই স্থান হইতে লইয়া গিয়া বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তির নিদর্শন দিনাজপুর রাজবাড়ীতে রক্ষিত হইয়াছে। কান্তনগরের কাস্তজীর মন্দিরটি একটি বিশেষ দ্রষ্টৰ্য বস্তু। ইহা একটি নবরত্ন মন্দির ছিল। ১৭০৪ খৃষ্টাব্দে দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথ রায় দিল্লী হইতে কান্তজীর বিগ্রহ আনাইয়৷ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বুখানান্‌ হ্যামিলটন্‌ ইহাকে বাংলার সবর্বশ্রেষ্ঠ মন্দির বলিয়া বর্ণনা করিয়াছিলেন। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের ভূমিকম্পে ইহার প্রভূত ক্ষতি হয়। পরে মহারাজা গিরিজানাথ ইহার সংস্কার করেন। এই মন্দিরটি যে কিরূপ সুন্দর ছিল তাহা ইহার পুরাতন চিত্র দেখিলে বুঝিতে পারা যাইবে। ইহার গাত্র সংলগ্ন ইষ্টকে রামায়ণ ও মহাভারতের এবং অন্যান্য নানা বিষয়ের চিত্রাবলী উৎকীর্ণ আছে। এগুলি কৃষ্ণনগরের কারিগরের কাজ । প্রতি বৎসর রাসযাত্রার মেলা উপলক্ষে এখানে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। কান্তনগরের মাটির জিনিস উত্তরবঙ্গে সুপ্রসিদ্ধ। মেলার সময়ে লোকশিল্পের নিদশন স্বরূপ দ্রব্যাদি এখনও পাওয়া যায়। বাণগড়–দিনাজপুর হইতে ১৮ মাইল দক্ষিণে দিনাজপর রোড নামক রাস্তার পাশ্বে পুনর্ভবা নদীর তীরে অবস্থিত গঙ্গারামপুরও একটি পুরাতন স্থান। ইহার নিকটে ধলদীঘি ও কালদীঘি নামে দুইটি পুরাতন দীঘিকা আছে। মুসলমান আমলে গঙ্গারামপুরে একটি সীমান্তরক্ষী সেনানিবাস বা ছাউনি ছিল এবং সেই সময়ে এই স্থানের নাম ছিল দমদম । ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে এখানে একটি মুনসেফী আদালত ছিল। কাহারও কাহারও মতে এই দমদমাই কোটিবর্ষের অস্তগত প্রাচীন কোটিকপুর বা দেবকোটনগরী। বরেন্দ্রভূমির উত্তরভাগ বহুকাল ধরিয়া কোটিবর্ষ নামে পরিচিত ছিল। কোটিকপুরে জৈন মহামুনি জম্বুস্বামীর সমাধি ছিল। এখানকার রাজপুরোহিত সোমশৰ্ম্মার পুত্র ভদ্রবাহ জৈনদের ছয়জন শ্ৰুতকেবলীর শেষ শ্ৰুতকেবলী ও মহারাজ চন্দ্রগুপ্তের গুরু ছিলেন । দাক্ষিণাত্যে চন্দ্রগিরি পবর্বতে তিনি দেহ রক্ষা করেন। প্লারামপুরের দেড় মাইল উত্তরে পুনর্ভবা নদীর পূর্বতীরে বাণনগর বা বাণগড়ের বিস্তীর্ণ শেষ অবস্থিত। সম্প্রতি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এই ধংশাবশেষ গুলিতে খনন কাৰ্য্য চলিতেছে। এই কাৰ্য্য সম্পূণ হইলে মূল্যবান ঐতিহাসিকতথ্য পাওয়া যাইবে বলিয়া অনুমিত হয়। প্রবাদ এই স্থানে অসুররাজ ৰাণের একটি দুর্গ ছিল। বাণরাজার সহয় বাছ ছিল এবং শিবের বরে তিনি যুদ্ধে অজেয় ছিলেন বলিয়া পুরাণে বর্ণিত আছে। তাহার কন্যা উষার সহিত শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের বিবাহ উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণের সহিত তাহার তুমুল যুদ্ধ হয় এবং সেই যুদ্ধে তাঁহার . পরাজয় ঘটে ও ৯৯৮ খানি হাত কাটা যায়। বাণগড়ের বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তি যে দিনাজপুর রাজবাটিতে রক্ষিত আছে তাহা পুবেই বলা হইয়াছে। এই স্থান হইতে প্রস্তর ও ইষ্টক সংগ্ৰহ করিয়া নিকটবর্তী R r -