পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵrՀ বাংলায় ভ্রমণ হয়। ১৬৯৬ খৃষ্টাব্দে চেতোয়া-বরদার রাজা শোভাসিংহ রহিম খাঁ নামক এক আফগান সর্দারের সহিত মিলিত হইয়া দিল্লীর বাদশাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং বাদশাহের অনুগৃহীত বৰ্দ্ধমান রাজ্য আক্রমণ করিয়া বৰ্দ্ধমান অধিপতি কৃষ্ণরাম রায়কে নিহত ও তাঁহার পরিজনগণকে বন্দী করেন। কৃষ্ণরামের কন্যার উপর অত্যাচার করিতে গিয়া শোভাসিংহ ছুরিকাঘাতে তাহার হস্তে নিহত হন। সাধবী কুমারী পাপীর স্পশে দেহ অপবিত্র হইয়াছে মনে করিয়া আত্মঘাতিনী হন। শোভাসিংহের মৃত্যুর পর বিদ্রোহী দল রহিম খাকে নেতৃপদ প্রদান করে। এই বিদ্রোহ দমন করিবার জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেবের পৌত্র আজিমৃ-উগ্রশান বৰ্দ্ধমানে প্রেরিত হন। বিদ্রোহী দলকে পরাজিত ও রহিম খাকে নিহত করিয়া তিনি তিন বৎসরকৰুি বৰ্দ্ধমানে বাস করেন এবং এখানে একটি মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করেন। বিদ্রোহ দমনের পর কৃষ্ণরামের পুত্র জগৎরাম বৰ্দ্ধমান জমিদারী ও বাদশাহের নিকট হইতে রাজা খেতাব লাভ করেন। জগৎরামের পুত্র কীৰ্ত্তিচন্দ্র রায় বৰ্ত্তমান মেদিনীপুর জেলার অস্তগত চন্দ্রকোণা ও বরদার রাজাদিগকে পরাস্ত করিয়া তাঁহাদের অধিকৃত অঞ্চল স্বীয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তী বৰ্দ্ধমান রাজগণের মধ্যে তিলকচাঁদ ও মহাতবিচাঁদ বাহাদুরের নাম উল্লেখযোগ্য। তিলকচাঁদ দিল্লীর সম্রাট শাহআলমের নিকট হইতে “ মহারাজাধিরাজ ’ উপাধি ও পাঁচহাজারী সনদ লাভ করিয়াছিলেন। কোন বিষয় লইয়া ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সহিত তাহার মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি স্বীয় অধিকারের মধ্যে কোম্পানির জাহাজের প্রবেশ নিষেধ করেন। ১৭৬০ খৃষ্টাব্দে নবাব মীরকাসিম বদ্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম ইংরেজদিগের হস্তে সমর্পণ করেন। এই ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট হইয়া তিলকচাঁদ বীরভূমরাজের সহিত মিলিত হইয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ; কোম্পানির সহিত যুদ্ধে তাঁহাদের পরাজয় ঘটে। তিলকচাদের পর মহারাজ তেজচন্দ্ৰ বৰ্দ্ধমানের গদীপ্রাপ্ত হন। তিলকচাদের এক পুত্র প্রতাপচাদ অল্প বয়সে গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘকাল পরে এক ব্যক্তি বৰ্দ্ধমানে আসিয়া প্রতাপচাদ নামে আত্মপরিচয় দেন। ইহাতে এক জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়। শেষ অবধি জাল প্রতাপচাদের দাবী টিকে নাই। মুসাহিত্যিক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “জাল প্রতাপচাদ ” নামক পুস্তকে এই ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ আছে। তেজচন্দ্রের মৃত্যুর পর তাহার দত্তকপুত্র মহারাজাধিরাজ মহাতাবর্চাদ বাহাদুর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় গবর্ণমেণ্টকে যথেষ্ট সাহায্য করায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে “হিজ্ব হাইনেস্থ ” উপাধি ও তোপের সম্মান লাভ করেন । বৰ্দ্ধমানের বর্তমান মহারাজা ইহার পৌত্র। পূবৰ্বাপর হইতেই বৰ্দ্ধমানের রাজগণ বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করিয়া আসিতেছেন। অধ্যাপক, শিল্পী, গায়ক, বাদক, কবি, চিত্রকর ও গ্রন্থকারগণের মধ্যে অনেকেই বৰ্দ্ধমান রাঞ্জের বৃত্তিভোগ করিয়াছেন। সুবিখ্যাত সাধক কবি কমলাকান্ত ও নীলকণ্ঠ বৰ্দ্ধমানের রাজসভা অলঙ্কৃত করিয়াছিলেন। মহারাজ মহাতাবর্চাদ বহু অথব্যয়ে মূল মহাভারতের একটি বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করিয়া উহা বিনামূল্যে বিতরণ করেন। fi বৰ্দ্ধমান শহরের দ্রষ্টব্য বস্তুর মধ্যে মহারাজার প্রাসাদ, গোলাপবাগ, দিলখো বাগ, শ্যামসায়র ও কৃষ্ণসায়র নামক দীঘি, সবর্বমঙ্গলা দেবীর মন্দির এবং লর্ড কার্জনের সম্মানাথ নিৰ্ম্মিত “সটার অফ ইণ্ডিয়৷ ” নামক তোরণ উল্লেখযোগ্য। রাজপ্রাসাদটি মহারাজ মহাতবিচাঁদ কর্তৃক বহু অথব্যয়ে নিৰ্ম্মিত হয়। গোলাপবাগে একটি পশুশালা আছে। কৃষ্ণসায়র দীঘি রাজা কৃষ্ণরাম রায় কর্তৃক খনিত। জনশ্রুতি যে দুববৃত্তগণ এই দীঘির মধ্যেই তাঁহাকে নিহত করে। 6a * - -