পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে ισά দুবরাজপুর হইতে ৫ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব প্রসিদ্ধ তীর্থ বক্রেশ্বর বা বক্রনাথ অবস্থিত। ইহা একটি পীঠস্থান। এখানে দেবীর ভ্র মধ্য পতিত হইয়াছিল, দেবীর নাম মহিষমদিনী, ভৈরব বক্রনাথ। মহাশুশানের উপর এই মহাপীঠ অবস্থিত। এখানে সাতটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে। দেবীর মন্দির প্রাঙ্গনে শ্বেত সরোবর নামক উষ্ণ কুণ্ড আছে। উহাতে স্নান করিয়া একটি গহ্বরের মধ্যে নামিয়া বক্রনাথ মহাদেবকে দশন করিতে হয় । বক্রনাথ তীর্থ সম্বন্ধে কাহিনী আছে যে পুরাকালে ব্রাহ্মণকুলোদ্ভূত হিরণ্যকশিপু দৈত্যকে বিনাশ করায় ব্রহ্মবধজনিত পাপে ভগবান নৃসিংহদেবের নখরে দারুণ জালা অনুভূত হয়। দেব সমাজে এই কথা প্রচারিত হইলে মহামুনি অষ্টাবক্র নৃসিংহদেবকে জালামুক্ত করিবার জন্য স্বেচছায় এই জালা স্বীয় মস্তকে ধারণ করেন। জালাপ্রভাবে অষ্টবক্রকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করিতে দেখিয়া নৃসিংহদেব তাহাকে বক্রনাথ মহাদেবকে স্পশ করিতে বলেন। গহবর মধ্যে নামিয়া অষ্টবক্র মুনি বক্রনাথকে স্পশ করিয়া উপবিষ্ট হইলে গুহামধ্য দিয়া সবৰ্বতীর্থের বারি আসিয়া তাহাকে অভিষিক্ত করে ও তিনি জালামুক্ত হন। শিবরাত্রির সময় বক্রনাথে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। শিবরাত্রির মেলায় লোক-শিল্পের পরিচায়ক কিছু কিছু দ্রব্য দেখিতে পাওয়া যায়। শ্বেত সরোবর ছাড়া আর যে ৭টি উষ্ণকুণ্ড আছে তাহাদের নাম অগ্নিকুণ্ড, ব্ৰহ্মকুণ্ড, সৌভাগ্য কুণ্ড, সূৰ্য্য কুণ্ড, জীবন কুণ্ড, ভৈরব কুণ্ড ও খর কুণ্ড। প্রত্যেকটি কুণ্ড সম্বন্ধে এক একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। সূৰ্য্যকণ্ডু সম্বন্ধে কথিত আছে যে একবার নারদ ঋষি বিন্ধ্যপবর্বতের নিকট গিয়া সুমেরু পবর্বতের উচচতার গুণগান করেন ; বিন্ধ্য ইহাতে অপমানিত বোধ করিয়া সগবেব সফীত হইয়া এত উচেচ মস্তক উত্তোলন করিলেন যে সূৰ্য্য আর পৃথিবীতে আলোক ও তাপ দান করিতে সমর্থ হইলেন না। বিপন্ন হইয়। সূৰ্য্যদেব এই কুণ্ডে আসিয়া শিবের শরণাপন্ন হইয়া তপস্যায় নিমগ্ন হইলেন। শিব তুষ্ট হইয়া বিন্ধকে মস্তক সঙ্কুচিত ও অবনমন করিতে বাধ্য করিলেন। জীবন কুণ্ডের কাহিনী এইরূপ। পুরাকালে সবর্ব ও চারুমতী নামে এক বৃদ্ধ ও ধৰ্ম্মপরায়ণ দম্পত্তি সংসার ছাড়িয়া বনে গিয়া ধৰ্ম্মচচর্চায় মনোনিবেশ করিলেন। একদিন একটি বাঘ আসিয়া সবৰ্বকে মারিয়া ফেলেন। চারুমতী দুঃখে তাহার স্বামীর প্রাণ ফিরাইয়া দিবার জন্য মহাদেবের নিকট তপস্যা করিতে লাগিলেন। মহাদেব প্রীত হইয় তাহাকে স্বামীর হাড়গুলি একত্র করিয়া বক্রেশ্বর তীর্থে গিয়া এই কুণ্ডের জলে ধৌত করিতে বলিলেন। চারুমতী এইরূপ করিব মাত্র সবর্ব বাচিয়া উঠিলেন। ভৈরব কুণ্ড সম্বন্ধে কথিত আছে, যে পূবেব ব্ৰহ্মারও পাচটি মুখ থাকায় তিনি শিবের সমকক্ষ বলিয়া দাবী করিলে শিব পুষ্ট হইয়। নিজ মস্তক হইতে একটি জটা ছিড়িয়া ফেলিলেন ; জটা হইতে তৎক্ষণাৎ বটুক ভৈরব বাহির হইয় আসিয়া শিবের আজ্ঞা প্রার্থনা করিলেন। শিব তাঁহাকে ব্ৰহ্মার প্রধান মুখটি কাটিয়া ফেষ্টিতে বলিলেন। বটুক ভৈরব অবিলম্বে আজ্ঞা পালন করিলেন, কিন্তু ব্ৰহ্মার কত্তিত মুখটি তাঁহার অঙ্গুলিতে আটয়া লাগিয়া রহিল ; ভারতের নানা তীর্থে গিয়া তিনি মস্তকটি ঝাড়িয়া ফেলিতে পারিলেন না ; অবশেষে বারাণসীতে যাইলে মস্তকটি পড়িয়া গেল কিন্তু বটুক ভৈরব আঙ্গুলের ক্ষতে কষ্ট পাইতে লাগিলেন। মান স্থানে ঘুরিয়া শেষে বক্রে শ্বর তীর্থে আসিয়া এই কুণ্ডে স্নান কবিলে তিনি আরোগ্যলাভ করেন; তদবধি কুগুটি ভৈরব কুণ্ড নামে পরিচিত হয়। এই উষ্ণকুও গুলির জলের নানা রোগ আরোগ্য করিবার ক্ষমতা আছে বলিয়া কথিত। অধুনা বৈজ্ঞানিকগণের দৃষ্ট এই দিকে পড়িয়াছে; কালে হয়তো বক্রেশ্বর একটি আধুনিক আয়ােগ্য নিকেতনে পরিণত হইবে ।