পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে boጫ পরামর্শক্রমে রাত্রিবেলায় সৈন্যবাহিনীর পুরোভাগে একদল গাভী রাখিয়া বীরসিংহপুর আক্রমণ করেন। বীরসিংহ এই অতকিত আক্রমণ প্রতিহত করিতে আসিয়া দেখিলেন যে অস্ত্রব্যবহার করিতে হইলে গো-হত্যা করিতে হয়। তখন তিনি মৰ্ম্মাহত হইয়া নিজ সৈন্যকে অস্ত্র ক্ষেপণ করিতে নিষেধ করিলেন । শত্রুসৈন্য বিনা বাধায় সসৈন্যে বীরসিংহকে নিহত করিল। রাজমহিষী নিকটস্থ কালী দীঘিতে প্রাণ বিসজৰ্জন দিলেন। তদবধি কালীদীঘি “রাণীদহ ” বা “রাণীর স্বাধ" নামে পরিচিত হইয়াছে। কিংবদন্তী, এই বীরসিংহের নাম হইতেই জেলার নাম বীরভূম হইয়াছে। কেহ কেহ বলেন, সাঁওতালী ভাষায় বীর শব্দের অর্থ জঙ্গল এবং পূবেৰ্ব এই অঞ্চল জঙ্গলময় ছিল বলিয়াই সাঁওতালগণ উহাকে বীর ভূইয়া নামে অভিহিত করিত। বীর ভূইয়া হইতেই বীরভূম শব্দের উৎপত্তি। বীরভূম নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে অপর এইরূপ একটি কাহিনীও প্রচলিত আছে। একদা বিষ্ণুপুরের এক রাজা তাহার শিক্ষিত বাজপার্থীর দ্বারা অন্য পার্থী শিকার করিতে বাহির হইয়া এই অঞ্চলে আসিয়া পড়েন। কিছু দুরে একটি বক দেখিতে পাইয়া তিনি বাজপাখীকে উহার উদ্দেশে ছাড়িয়া দিলেন। বকটি কিন্তু পলাইবার কোনরূপ চেষ্টা না করিয়া বাজপার্থীকে প্রতি-আক্রমণ করিল। বাজপার্থী পরাজিত হইয়া রাজার নিকট ফিরিয়া গেল এবং বক পূবেৰ্বর ন্যায় আহার অন্বেষণে রত হইল ! বাজপাখী অতি সহজেই বক শিকার করিয়া থাকে । কিন্তু এই স্থলে বিপরীত ব্যাপার দেখিয়া রাজা অত্যন্ত বিসিত হইলেন এবং ভাবিলেন, যে দেশের পার্থী এত সাহসী হয় সে দেশের মানুষ নিশ্চয়ই অতিশয় বীর ও সাহসী হইবে। তিনি সেই জন্য এই অঞ্চলের নাম রাখিলেন বীরভূমি বা বীরভূম। বীরসিংহপুরের রাজবাটীর ধ্বংসাবশেষের নিকটেই রাজধানীর অপর অংশ জঙ্গলপূর্ণ হইয়৷ এখন “ ভাণ্ডীরবন ’ নামে পরিচিত হইয়াছে। এই বনে “ সিদ্ধনাথ ’ বা ভাণ্ডেশ্বর নামে অনাদিলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছেন। প্রবাদ, রামায়ণে উল্লিখিত বিভাণ্ডক মুনি বহুকাল ধরিয়া এই শিবের পূজা করিয়া সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন বলিয়া এই শিবের নাম হয় ভাণ্ডেশ্বর। রাজনগর—শিউড়ী হইতে ১৪ মাইল পশ্চিমে নগর নামক একটি প্রাচীন রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। কেহ কেহ অনুমান করেন যে ১২২৭ খৃষ্টাব্দে সুলতান গিয়াসৃউদ্বদীনের মৃত্যুর পর বীরসিংহপুরের রাজা বীরসিংহের পলায়িত পুত্র সুযোগ বুঝিয়া বীরসিংহপুরের অনতিদূরে নাগর বা নগর নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি বীররাজ নাম গ্রহণ করেন। পলায়নকালে তিনি বীরসিংহপুর হইতে কুলদেবতা কালিকা দেবীর মূৰ্ত্তি সঙ্গে লইয়া আসেন এবং নূতন রাজধানী নগরে কালীদহ নামে একটি প্রকাও দীঘি খনন করাইয়া উহার তীরে এক মন্দির মধ্যে দেবীযুক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে বীররাজের বংশধরগণ খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাবদীর শেষ ভাগ পর্য্যন্ত নগরে রাজত্ব করেন। বীররাজবংশের পতনের পর কালিকামূৰ্ত্তি পুনরায় বীরসিংহপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। নগর সম্বন্ধে অন্য জনশ্রুতি এই যে মহারাজ বল্লালসেনের দ্বারা কৃত কোন ধৰ্ম্মবিগহিত কধ্যে অসন্তুষ্ট ভুইয়া তৎপুত্র লক্ষ্মণসেন পিতৃরাজ্য ত্যাগ করিয়া অজয় নদের দক্ষিণ তীরে সেনপাহাড়ী নামক স্থানে আসিয়া বাস করেন। সেনপাহাড়ী নাম তাঁহারই নামানুসারে হয়। বর্তমানে সেনপাহাড়ী বৰ্দ্ধমান জেলার অন্তর্গত। সেনপাহাড়ীর নিকটে লক্ষ্মণসেন নিজ নামে